শাজাহানপুরে ভূমি কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে সরকারী বাঁধের ৪৬ গাছ কাটলেন স্থানীয় ব্যক্তি

337

বিশেষ প্রতিনিধি বগুড়া:

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট বামুনদিঘী পাড়া গ্রামে সরকারী বাঁধের ৪৬টি ইউক্লিপটাস গাছ কেটে নিচ্ছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। বাঁধটি বিল কেশপাথার কচুয়ার বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ এর আওতাধিন। বুধবার(২মে) ফজরের আজানের সময় থেকে অন্তত ১০জন শ্রমিক গাছ কাটায় নিয়োজিত হন। উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) অনুমতি দেয়ায় গাছ গুলো কেটে নিচ্ছেন বলে স্থানীয় বজলুর রহমান মঞ্জু সরকার দাবি করেছেন। কয়েক মাস আগেও মন্টু সেখান থেকে ৬টি ইউক্লিপটাস গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। বাাঁধের ৪৬টি গাছ কাটা হয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ২লক্ষ টাকা বলে সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং অনেক সদস্যরা জানিয়েছেন।

থানার এসআই আব্দুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সে সময় কৌশলে পালিয়ে যান বজলুর রহমান মঞ্জু। পুলিশ উভয় পক্ষকে উপজেলা ভূমি অফিসে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আসেন।

১৯৯৮সালে সারকারী অর্থায়নে বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মান করা হয়। ২০০১সালে নির্মান কাজ শেষ হয়। বিল কেশ পাথার কচুয়ার বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ এর মাধ্যমে বাঁধ রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই বছরই সোরে ৪কিলোমিটার বাঁধ রক্ষায় বন বিভাগ থেকে বৃক্ষ রোপন করা হয়। স্থানীয় ৪উপকার ভোগী সদস্যর মাধ্যমে সেগুলো পরিচর্যার দায়িত্ব দেয়া হয়।

সরেজমিনে বাঁধ এবং গাছ রক্ষনা বেক্ষনের কাজে সরকারী ভাবে নিয়োজিত উপকার ভোগী ফুলকোট বামুনদিঘী গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম(৪৫)। তিনি বলেন, ১৯৯৮সালে বাঁধের কাজ শুরু হয়ে ২০০১সালে শেষ হয়। সেই সময় সমিতির সদস্যরা গাছ গুলো লাগিয়েছিলেন। দীর্ঘ বছর ধরে তিনি গাছ গুলোর পরিচর্যা করে অনেক বড় করে তুলেছেন। সারে ৪কিলোমিটার বাঁধে তিনি সহ মোট ৪জন দায়িত্ব পালন করেন।

বুধবার ফজরের আজানের সময় অন্তত ১০জন লোক লাগিয়ে বজলুর রহমান মঞ্জু সরকার বাঁধের গাছ গুলো কাটতে শুরু করেন। কেটে ফেলা প্রত্যেকটি গাছ ইউক্লিপটাস। সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী এই গাছে তার নিজেরও অধিকার আছে। গাছ বিক্রির টাকার একটা অংশ তিনিও পাবেন। কিন্তু রাতের আঁধারে গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করলে তিনি কোন টাকাই পাবেন না। এত বছর ধরে পরিচর্যা করা গাছের কোন লাভই তিনি পাবেন না।

ফুলকোট গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। তার নিজ হাতে লাগানো ছিলো গাছ গুলো। সরকারী বাঁধের গাছ। কোন মানুষ একসাথে এতগুলো গাছ কাটতে পারেনা। এটা কোন মানুষের কাজ হতে পারেনা।

ফুলকোট গ্রামের বজলুর রহমান মঞ্জু সরকার জানান, গাছ গুলো তার জমিতে তিনি নিজেই লাগিয়েছিলেন। বাঁধের পাকা সড়কের অর্ধেক পর্যন্ত তার জমির সীমানা। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার জাহিদুলকে সাথে নিয়ে এসে তিনি জমি মেপে দেখেছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আশিক খান তাকে গাছ গুলো কাটার অনুমতি দিয়েছেন। রাতে না কেটে দিনের বেলা কাটার জন্য তারা বলেছেন। তাই তিনি গাছ গুলো কেটে নিচ্ছেন।

বিল কেশপাথার কচুয়ার বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক বাবু বলেন, বন্যার পানি থেকে বাঁধ রক্ষায় বনবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী গাছ লাগানো হয়েছিলো। ৪জন উপকার ভোগী সদস্যরা সেই গাছ পরিচর্যা করেছেন। গাছ গুলো এখন বড় হয়েছে। গাছ খেকোদের চোখ পড়ায় গাছ গুলোকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যার যত টাকার প্রয়োজনই হোক। এতগুলো গাছ একসাথে কেটে নিয়ে যাওয়ার মত জঘণ্য কাজ কোন সুস্থ্য মানুষ করতে পারেনা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আশিক খান মোবাইল ফোনে জানান, গাছ কাটার অনুমতি তিনি কাউকে দেননি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসিফ আহমেদ জানান, পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি রাস্তার গাছ হয় অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যাক্তি মালিকানার গাছ হলে ব্যবস্থা নেয়া যাবেনা।