বিধবা ভাতার কার্ডটি ফেরত দিতে চান আদমদীঘির লাজিনা বেওয়া

279

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার লাজিনা বেওয়া নামের এক বিধবা নারী তার ভাতার কার্ড ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।অনেক অসহায় মানুষ যখন ঘুষ দিয়েও বিধবা ভাতার কার্ড পাচ্ছেন না ঠিক তখনই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ধুলাতইর গ্রামের মৃত হাদিস আলীর স্ত্রী।

রোববার (৬ জুন) সন্ধ্যায় পারিবারিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তার ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

১৯৮২ সালে মাত্র ১০ শতাংশ সম্পত্তি রেখে স্বামী হাদিস আলী মারা যান। মাত্র ২২ বছর বয়সে বিধবা হন তিনি। ছোট দুটি মেয়ে ও ৬ মাস বয়সী ছেলে মামুনুর রশিদ মামুনকে আঁকড়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ছেলে-মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে ১৯৯৮ সালে বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত হন। অনেক কষ্টের মাঝেই মেয়ে দুটিকে বিয়ে দেন।

এদিকে, ছেলে মামানুর রশিদ মামুন পড়াশোনা শেষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৪ সালে মাত্র তেত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে সরকারিভাবে (জি টু জি পদ্ধতিতে) মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। দুবছর পর দেশে ফিরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পান। এতে তার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসে।

লাজিনা বেওয়া জানান, যখন বিধবা ভাতা তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যদি কখনো সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে, তাহলে বিধবা ভাতার কার্ডটি ফেরত দেবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় তিনি কার্ডটি ফেরত দিতে চান। কষ্টের দিনে এমন সহযোগিতা পাওয়ায় সরকারের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সবাই যখন পেতেই ব্যস্ত তখন তিনি ফেরত দিতে চান। এটি সত্যিই আশ্চর্যজনক ঘটনা। এ ইউনিয়নে আগে এভাবে কেউ কার্ড ফেরত দেয়নি। সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই নারীর ছেলে মামানুর রশিদ মামুন বিষয়টি মোবাইল ফোনে আমাকে নিশ্চিত করে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দীন বলেন, ‘দেশে এমন মানুষ বিরল। এ উপজেলায় এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিধবা ওই নারীর এমন সিদ্ধান্ত খুব ভালো লেগেছে। তার হিসাব বন্ধের জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। আবেদন পেলে ওই হিসেব বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এখান থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত, প্রয়োজন ছাড়া কোনো কিছু নেয়া ঠিক নয়।’