বগুড়ার শিবগঞ্জে এক বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া, তিন মাতব্বর গ্রেফতার

349

রশিদুর রহমান রানা শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ায় বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া, তিন মাতব্বর কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বগুড়ার শিবগঞ্জে মেহেদী হাসান (১৬) নামের এক বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দুই জন গ্রাম্য মাতব্বরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলোঃ শিবগঞ্জ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামের মাতব্বর ও গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম মেজবা (৫২), একই গ্রামের শফিউল ইসলাম খোকন (৫৫) ও তারেক রহমান (২০)। বাউল শিল্পী মেহেদী হাসান শিবগঞ্জ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেনের ছেলে। মেহেদীর পারবিবারিক সূত্রে জানা যায়, মেহেদী হাসান ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করে আর্থিক অনটনের কারণে পড়াশুনা করতে পারেনি। এরপর তার দাদা আলম মন্ডলের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পার্শ্ববর্তী ধাওয়াগীর গ্রামেন মতিন বাউলের সাথে পরিচয় হলে তার সাথে চলাফেরা শুরু করেন। মেহেদী হাসান গত কয়েক বছর ধরে মতিন বাউলের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউল গান গেয়ে উপার্জিত টাকায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
বাউল শিল্পী হওয়ার কারণে মেহেদী হাসান সাদা লুঙ্গি, সাদা ফতুয়া এবং শরীরে সাদা গামছা ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি মাথায় বড় লম্বা বাবরী চুল রাখেন। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা মেহেদী হাসানের পরনের পোশাক এবং মাথার চুল নিয়ে বিভিন্ন সময় অশালীন মন্তব্য করে আসছিলেন। এসবের প্রতিবাদ করায় গ্রেফতারকৃত তিনজনসহ আরো ৩-৪ জন গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার দিকে আলম মন্ডলের বাড়িতে যান। তারা মেহেদী হাসানকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জোরপূর্বক চুল কাটা মেশিন দিয়ে তার মাথা ন্যাড়া করে দেন। মাতব্বররা বলে বাউল গান ছেড়ে দিতে হবে এবং মাথার চুল আবারো বড় করলে গ্রাম ছাড়া করা হবে বলে হুমকি দেন।

শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ( ওসি) মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে আটক তিনজনসহ ৫ জনের নামে মেহেদী হাসান বাদী হয়ে রাতেই থানায় মামলা দায়ের করেন।

শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার সংবাদ পেয়ে বাউল শিল্পীকে থানায় এনে তার মুখে বিস্তারিত শুনে অভিযান চালানো হয়। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো দুইজন পলাতক রয়েছেন।