অন্তর্দ্বন্দ্বের হট্টগোলে বগুড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কার্যক্রম স্থগিত

174

রাকিব শান্ত

বগুড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে অনাকাংখিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বগুড়া সদরের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই চলছিল। যাচাই-বাছাই শুরুর কিছুক্ষণ পরপরই হট্টগোল শুরু হলে কার্যক্রম স্থগিত ঘোষনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুুুর রহমান।

উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা জানান, প্রথমে বগুড়া সদরের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ছিল ৪৮২ জনের। এরপর এক যাচাই-বাছাই শেষে ৯৮ জনকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়। ইতিপূর্বে এর বাহিরে ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৯২ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে গেজেট প্রকাশিত হয়। শনিবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এই গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের দিন ধার্য্য করা ছিল।

যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি হিসাবে জামুকা প্রতিনিধি আব্দুল কাদের, সদস্য সচিব হিসাবে ইউএওন মো. আজিজুর রহমান, সদস্য হিসাবে এমপির প্রতিনিধি এ্যাড সদরুল আনাম রঞ্জু, এবং আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, শনিবার দুপুর ১১ টা থেকে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। পাঁচজনের যাচাই-বাছাই শেষ হওয়ার পরেই বগুড়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আইনজীবী এ্যাড. রেজাউল করিম মন্টুসহ তার সাথে থাকা কয়েকজন অভিযোগ তোলেন যে, “কমিটিতে (যাচাই-বাছাই) কাজে যারা নিয়োজিত রয়েছেন, তারা (মঞ্জু ও কাদের) প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। তাই তাদের যাচাই বাছাই আমরা মানি না।”

এ কথা বলার পরই হলরুমে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অপ্রীতিকরি পরিস্থিতি এড়াতে যাচাই-বাছাই বন্ধ ঘোষণা করে কমিটি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী সদরুল আনাম রঞ্জু মোবাইলে জানান, “আমি মানবাধিকার কর্মী। আমার সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি নেই। আইনজীবী রেজাউল করিম মন্টুর সাথে আমার আদালত কেন্দ্রীক বোঝাপড়ায় সমস্যা আছে। আামার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ নথি ও আইনগত দিক দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। যদিও কোনো অভিযোগের বিষয়ে আমি অফিসিয়ালি কিছুই জানি না। আর রেজাউল করিম মন্টুই তো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। অথচ আজকে তিনি শতশত লোকজনকে হয়রানির মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ফেলে দিলেন।”

উক্ত যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, “আমিনুল ইসলাম মঞ্জুর লোকজন যাচাই-বাছাইকালে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। একটি দুর্নীতিবাজ মহল মুক্তিযোদ্ধা তালিকার তাদের পছন্দের সাধারণ লোকজনকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্যই উক্ত হট্টগোল সৃষ্টি করেছেন। আমি চারবার বগুড়া সদরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ সম্পুর্ন ভিত্তিহীন ও অমূলক।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “মন্টু নিজেই মুক্তিযোদ্ধা নন।”

এদিকে এ ব্যাপারে রেজাউল করিম মন্টু ভিন্ন ভাষ্য দিয়ে অভিযোগ করে বলেন যে, “প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমেই মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই হতে হবে। এই কমিটির সভাপতি ও এমপির প্রতিনিধি কেউ মুক্তিযোদ্ধা নন। তাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করার মানে হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসস্মান করা। ইতোপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ রয়েছে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ্য করেন। সেসব অভিযোগের সঠিক তদন্ত দাবী করেন তিনি। এসব কারণেই তিনি সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা আজ উক্ত যাচাই-বাছাই প্রোগ্রাম এ বিরোধীতা করেছেন বলে তিনি জানান।’

এ ব্যাপারে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান দৈনিক প্রত্যয় কে জানান, “উপস্থিত দুই পক্ষের শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ ও কথোপকখনে পরিবেশ খুবই উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” এই কারণেই তিনি পুলিশের সহায়তার পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। জামুকার সাথে কথা বলে আপাতত সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাচাই বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান আরও জানান যে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) এর সাথে কথা বলে জানানো হবে।