শেরপুরের অলি-গলিতে ভুয়া ডেন্টাল ডাক্তারের ছড়াছড়ি

248

মোঃ জাকির হোসেন, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার শেরপুরে খন্দকার পাড়া এলাকায় একটি ডেন্টাল চেম্বারে রোগীর চিকিৎসা করছে এক কিশোর।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার অলিগলিতে ভুয়া ডেন্টাল ডাক্তারে ছেয়ে গেছে। হাতুড়ে ডাক্তারের ভূতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এই সব ভুয়া ডাক্তারদের চিকিৎসায় বিভিন্ন মানুষ ভোগান্তির শিকার হলেও স্বাস্থ্য প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা ।

অনুসন্ধানে জানাযায়, শহরের হাটখোলা রোড, মাজার রোড, রেজিঃঅফিস মোড়, খন্দকার পাড়া সহ শেরপুর ও শেরপুর শহরতলীতে প্রায় ৩০ টি ডেন্টাল চেম্বার রয়েছে। এসকল চেম্বারে সরকার অনুমোদিত কোন ডেন্টাল ডাক্তার নাই। এসকল চেম্বারে রুগী দেখেন চিকিৎসা কাজে অভিজ্ঞও লোকেরা। এমনকি কিশোর বালকদেরও চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে একটি চেম্বারে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের নামের আগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তারা সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ‘ডাক্তার” ও বিভিন্ন ভুয়া ডিগি লাগিয়ে রুগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বহুদিন ধরে শেরপুর ডিজে হাইস্কুল খেলার মাঠ এলাকায় একজন ডেন্টাল সার্জনের প্যাড ও সিল ব্যবহার করে তার ভাই রুগী দেখেন বলে অভিযোগ আছে।
শেরপুরের বিশিস্ট দন্ত চিকিৎসক ডাঃ তন্ময় স্যান্ন্যাল (এমবিবিএস, বিডিএস) জানান, সরকারি অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজ করতে করতে চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর ভাল অভিজ্ঞতা অর্জন করে চিকিৎসা এবং নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সকল প্রকার রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছে।

মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ১৯৮০ (১৯৮০ সনের ১৬ নং আইন) রহিতক্রমে কতিপয় সংশোধনীর ২২। (১) এই আইনের অধীন নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করিতে অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক, ক্ষেত্রমত, ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে পারিবেন না। (২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করিলে উক্ত লংঘন হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড অথবা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। প্রতারণামূলক প্রতিনিধিত্ব বা নিবন্ধনের দন্ড ২৮। (১) যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণার আশ্রয় লইয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে একজন স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসক বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসক হিসাবে এই আইনের অধীনে নিবন্ধন, অথবা নিবন্ধন করিবার উদ্যোগ গ্রহণ, অথবা মিথ্যা বা প্রতারণামূলক প্রতিনিধিত্ব প্রকাশ করিবার চেষ্টা করেন অথবা মৌখিক বা লিখিতভাবে উক্তরূপ ঘোষণা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড অথবা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। এসকল ভূয়া ডাঃ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করছেন। দন্ত চিকিৎসক সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ডাঃ ব্যবহার করছেন, দিনের পর দিন আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে আসছেন। আবার কোন কোন সময় তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ঔষধ লিখছেন, যা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ।

এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বিডি২৪লাইভকে বলেন, ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষে নির্দেশ ছাড়া আমরা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনা। তারা নির্দেশ দিলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী শেখ জানান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। কেহ যদি নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুল চিকিৎসা প্রদান করে তবে তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।