১০বছরে উভয় পক্ষে নিহত ৮

শাজাহানপুরে প্রতিপক্ষের কোপে একজন সিরিয়াল কিলারের মৃত্যু

171

শাজাহানপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ফোরকান(৩৫) প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হয়েছেন। পূর্ব শত্রুতার জের এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইট বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটে। গত সোমবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে ফেলে যায়। পুলিশ এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ইনটেনসিভ কেয়ায়র ইউনিট(আইসিইউ) চিকিৎসাধিন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তি ওই এলাকার মৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারের ছেলে। নিহত ফোরকানের বিরুদ্ধে ওই এলাকার পৃথক ২টি হত্যা মামলা বিচারাধিন রয়েছে। সে নিহত শাহীন বাহিনীর সদস্য। ২০০০সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শুরু করে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত উভয় পক্ষের মোট ৮জন নিহত হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নাই এবং জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নাই। পাল্টা হামলার আশংকায় বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নিহতের মা শাহানা বেওয়া জানান, তার ছেলে ভালো হয়ে গিয়েছিলো। সোমবার দুপুড়ে ডাউল দিয়ে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তা থেকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
সরেজমিনে জানাযায়, ফুলতলা এলাকায় শাহীন এবং মজনু প্রামানিক দুই বন্ধু সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে নিজেদের বগুড়া জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম লেখান। অভ্যন্তরীন কোন্দলে শাহীনের হাতে ২০০০সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মজনুর পিতা শুকুর আলী প্রামানিক নিহত হন। কোনঠাসা হয় মজনু পরিবার। বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকে শাহীন। তার সহযোগীরাও বিভিন্ন পেশায় ঢুকে যায়। একটা সময় ফিরে আসে শাহীন এবং পুরাতনের সাথে নতুন সযোগীদের নিয়ে আবারো আধিপত্য বিস্তার শুরু করে এবং মজনু পরিবারের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পরে। উপজেলার ফুলদীঘি এলাকায় সরকারী একটি বাগানে মজনু পরিবারের হাতে নিহত হয় শাহীন। আম বাগানের একটি কাঠের চকির উপরে মাথায় কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে দিয়ে বগুড়ায় খুনের একটি স্টাইল চালু হয়ে যায়।
শাহীন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় নিজের পরিত্যাক্ত একটি বাড়িতে ছাগলের খামারে খুন হয় মজনু প্রামানিকের ভাগিনা যুবলীগ নেতা শামীম আহম্মেদ বুশ। তার মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদ্যরা। এই ঘটনার কিছু দিনের মাথায় উপজেলার গন্ডগ্রাম এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাড়িতে মজনু এবং তার ভাতিজা নাহিদকে একসাথে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। রেশ কাটতে না কাটতেই একই বাহিনী ফুলতলা এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে মজনুর ছোট ভাই রঞ্জু প্রামানিককে। সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিতি পায় শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। কোনঠাসা মজনু পরিবার আক্রমনের চেয়ে আত্বরক্ষায় চেস্টা চালায়। এরমধ্যে বুশ এবং রঞ্জু হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় আসামী ছিলেন ফোরকান। মামলায় তদন্ত শেষে অন্য আসামীদের সাথে ফোরকানের নাম সহ কোর্টে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
মামলা গুলোয় জামীন নিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেস্টা করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। এসময় মজনু পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয় শাহীন বাহিনীর সহযোগী আকুল।
গোপন সংবাদের ভিত্বিতে শাজাহানপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সে সময় বিপুল পরিমান দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন। পরে আরেকটি র‌্যাবের অভিযানে মজনুর ছোট ভাই নান্টুকে বিদেশী অস্ত্র গুলি সহ গ্রেফতার করেন র‌্যাব বগুড়া।
আগামী ২৮ফেব্রুয়ারী বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন নিহত মজনুর ভাতিজা নাদিম প্রামানিক। এই সুযোগে এলাকা নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেস্টা করছিলেন শাহীন বাহিনীর সদস্যরা।
বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার সকালের দিকে রঞ্জুর ছেলে সুমন এবং তার ফুপাতো ভাই মানিককে মারপিট করে ফোরকান। এতে মানিক আহত হন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ফোরকানকে ফুলতলা বাজারের পার্শ্বে মাথায় কুপিয়ে চলে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। চিকিৎসাধিন অবস্থায় পরদিন মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ফোরকানকে মৃত ঘোষনা করেন চিকিৎসক।
মজনু পরিবারের গুলফি বেগম এবং জরিনা বেওয়া জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুমন এবং মানিকের সাথে ফোরকানের বাক বিতন্ডা হয়। ফোরকানরা মানিককে মেরে আহত করে। তারপরে কি হয়েছে তা তাদের জানানেই।
শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক(সার্বিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।