শাজাহানপুরে ২দল সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষে আহত ৪ঃ বাড়ি লুট

153

শাজাহানপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ এলাকায় আধিপত্ব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা এলাকা আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৮টার দিকে ২টি সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে ৪জন আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই উর্ধতন কর্মকর্তা সহ পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে চলে যাওয়ার পরে রাত সারে ১২টার দিকে একটি পক্ষ আরেকটি পক্ষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, টিভি সহ দামী জিনিস পত্র লুট করে।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছে নিহত শাহীন বাহিনীর সদস্য ওই এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে ফরহাদ, তার ভাই ফয়সাল এবং তাদের সহযোগী শাকপালা এলাকার মশিউর রহমান। অপর পক্ষে আহত হন নিহত মজনু গ্রুপের সদস্য রমজান মিয়া। ঘটনার সাথে সাথে আতংকিত ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে চলে যায়।
সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে বগুড়া পৌর সভার ১৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাদিম প্রামানিক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ওমর ফারুখ সহ মোট ৩জনকে গ্রেফতার করেছেন।
সরেজমিনে জানাযায়, ফুলতলা এলাকায় শাহীন এবং মজনু প্রামানিক দুই বন্ধু সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নিজেদের বগুড়া জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় চলে আসেন। অভ্যন্তরীন কোন্দলে শাহীনের হাতে ২০০০সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মজনুর পিতা শুকুর আলী প্রামানিক নিহত হন। কোনঠাসা হয় মজনু পরিবার। বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকে শাহীন। একটা সময় তিনি ফিরে আসেন এবং পুরাতনের সাথে নতুন সযোগীদের নিয়ে আবারো আধিপত্য বিস্তারে আবারো মজনু পরিবারের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পরে। উপজেলার ফুলদীঘি এলাকায় সরকারী একটি বাগানে মজনু পরিবারের হাতে নিহত হয় শাহীন। আম বাগানের একটি কাঠের চকির উপরে মাথায় কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে দিয়ে বগুড়ায় খুনের একটি স্টাইল চালু হয়ে যায়। শাহীন নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধের দায়িত্ব নেন পরবর্তি প্রজন্ম।
এবার ফুলতলা বাজার এলাকায় নিজের পরিত্যাক্ত একটি বাড়িতে ছাগলের খামারে খুন হয় মজনু প্রামানিকের ভাগিনা যুবলীগ নেতা শামীম আহম্মেদ বুশ। তার মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদ্যরা। এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যে উপজেলার গন্ডগ্রাম এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাড়িতে মজনু এবং তার ভাতিজা নাহিদকে একসাথে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। রেশ কাটতে না কাটতেই এই বাহিনী ফুলতলা এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে মজনুর ছোট ভাই রঞ্জু প্রামানিককে। এই ঘটনার পর বগুড়া শহরে সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিতি পায় শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। এই বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা হলেন শাহীনের ছেলে আকুল, শাহীনের আত্বীয় ছোট শাহীন, ফোরকান তার আপন ভাই ফরহাদ এবং ফয়সাল। এই বাহিনীর আরেক সদস্য মিস্টার সম্প্রতি অভ্যন্তরীন কোন্দলে নিহত হন। এই বাহিনীর অন্তত ৩০জন অস্ত্রধারী দূদ্ধর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে।
কোনঠাসা মজনু পরিবার আক্রমনের চেয়ে আত্বরক্ষায় চেস্টা চালায়। এরমধ্যে বুশ এবং রঞ্জু হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় আসামী ছিলেন ফোরকান। মামলায় তদন্ত শেষে অন্য আসামীদের সাথে ফোরকানের নাম সহ কোর্টে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
মামলা গুলোয় জামীন নিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেস্টা করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। এসময় মজনু পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয় শাহীন বাহিনীর সহযোগী আকুল।
গোপন সংবাদের ভিত্বিতে শাজাহানপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সে সময় শাহীন বাহিনীর সদস্যদের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমান দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন। পরে আরেকটি র‌্যাবের অভিযানে মজনুর ছোট ভাই নান্টুকে বিদেশী অস্ত্র গুলি সহ গ্রেফতার করেন র‌্যাব বগুড়া।
বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছিলেন নিহত মজনুর ভাগিনা এবং নিহত নাহিদের ভাই নাদিম প্রামানিক। এসময় শাহীন বাহিনীর সদস্যরা নিহত মজনুর ভাতিজাদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। মজনু গ্রুপের সদস্যরা শাহীন বাহিনীর সদস্য ফোরকানকে কুপিয়ে হত্যা করে। সেই মামলায় নাদিম সহ অন্য আসামীরা গা ঢাকা দিলে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় ত্রাস শুরু করে। ফুলতলা বাজারের নির্বাচিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে নিজেদের ইচ্ছামতো কমিটি ঘোষনা করেন। বাজার সমিতির প্রতিদিনের আদায়ের টাকা তাদের নিজেদের পকেটে নেয়া সহ সমিতির অফিস ভাংচুর এবং বাজারের সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে। সমিতির অফিস সহায়ক আব্দুল জলিলকে মেরে আহত করে।
গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত থেকে জামীনে মুক্ত হয়ে এলাকায় আসেন নাদিম প্রামানিক সহ অন্য আসামীরা। ফুলতলা স্ট্যান্ডে সবাই চা খেতে আসছিলেন। এসময় ফুলতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থান নেন শাহীন গ্রুপের সদস্যরা। সেখানে নাদিম প্রামানিক এর উপরে হামলা করতে এসে মারখান শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে নাদিম প্রামানিকের কাজের লোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাত সারে ১২টার দিকে মজনু গ্রুপের সদস্য ওমর ফারুখের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্নালংকার, টিভি সহ দামী জিনিস লুট করে নিয়ে গেছে বলে ফারুখের স্ত্রী দাবী করেন। একই সময়ে এই গ্রুপের আরেক সদস্য মানিকের বাড়ির প্রধান দড়জা ভেঙে গহনা, টাকা লুট করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নেয়ার সময় গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে নাদিম প্রামানিক এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য ওমর ফারুখকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক(সার্বিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মোট ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারপিটের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।