পলাশবাড়ীর হোসেনপুর ইউনিয়নে কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

131

শাহারুল ইসলাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কর্মহীন শ্রমজীবিদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্প চালু করেছে সরকার। তবে বঞ্চিত অসহায়দের তালিকায় স্বচ্ছল ও প্রভাবশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করারও অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাঠে কাজ না থাকায় কর্মহীন প্রান্তিক শ্রমজীবি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের মত হোসেনপুর ইউনিয়নেও ৪০ দিনের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এতে সপ্তাহে পাঁচদিন সরকারীভাবে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে মাটি কাটার কথা। যা গত এপ্রিল মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হবে। প্রতিদিন কাজের বিনিময়ে প্রত্যেক শ্রমিক ২০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পাবে।

প্রকল্প চলাকালীন ২৭ এপ্রিল হোসেনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের অনেকেই কাজ করে না। অথচ তাদের হাজিরা খাতায় ঠিকই স্বাক্ষর হয়।

ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৩৩ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও কাজ করছেন মাত্র ১৬ জন শ্রমিক।

শ্রমিক সরদার জানান, বাকি শ্রমিকেরা কোন দিনও কাজে আসে না, যদিও দুই একজন কখনও কখনও আসে স্বাক্ষর দিয়ে চলে যায়। ওখানেই দেখা হয় ইউপি সদস্য লোকমান হোসেনের সাথে, তার কাছে ৩৩ জন শ্রমিকের স্থলে ১৬ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য না করে সাইকেল নিয়ে সটকে পড়েন। এর আগে একাধিক বার উক্ত ইউপি সদস্য লোকমান আলীর বিরুদ্ধে কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজ করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পরে অবশ্য তিনি জানান এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান সবই জানেন, যা করা হচ্ছে চেয়ারম্যানের নির্দেশেই করা হচ্ছে।

৪নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও একই চিত্র, সেখানেই বেশ কিছু শ্রমিক কখনোই কাজে আছে না অথচ তারা নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওহেদ মিয়া জানান, তালিকায় চেয়ারম্যানের পছন্দের লোকেরা কাজে আসে না। কেন আসে না জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটা চেয়ারম্যান সাহেবই ভাল জানেন।

৩নং ওয়ার্ডে দেড়টার দিকে গিয়ে কোন শ্রমিককে পাওয়া যায়নি। ওই ওয়ার্ডের জনগণ জানান, শ্রমিকেরা ১০টার দিকে এসে ১টার মধ্যেই চলে যায়। উক্ত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, আমার ওয়ার্ডে ঠিক ভাবেই শ্রমিকেরা কাজ করে থাকে।

২নং ওয়ার্ডে গিয়েও একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়, ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আঃ মান্নান জানান, চেয়ারম্যানের পছন্দের লোকেরা বাদে সবাই কাজে আসে। কাজ না করেই কিভাবে মজুরী পায় জানতে চাইলে, ওই ইউপি সদস্য জানান সব কথা মুখে বলা যায় না বুঝে নিতে হয়। তবে ইউপি সদস্য আঃ মান্নান উপস্থিত শ্রমিকদের দিয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করে ভালোভাবে কাজ করে নেয় বলে অনেকেই জানান।

এদিকে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যায় ৬নং ওয়ার্ডে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় হাজিরা খাতা অনুযায়ী সঠিক সংখ্যক শ্রমিক দিয়েই কাজ করানো হচ্ছে। ইউপি সদস্য পল্লব মিয়া সার্বক্ষণিক নজরদারীতে তিনি শ্রমিকদের নিয়ে সঠিক ভাবে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।

প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের তথ্য সংশ্লিষ্ট সাইনবোর্ড থাকার কথা। ইউনিয়নের কোথাও প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা যায়নি। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করতেই সেই সাইনবোর্ড সরবরাহ করা হয়নি বলে অভিযোগ অনেকের।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্পের সভাপতি ও সদস্যরা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করতেই এভাবে খাতা-কলমে শতভাগ শ্রমিক উপস্থিতি দেখিয়ে বাস্তবে কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

প্রকল্পের একাধিক সভাপতি জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশ মোতাবেক তারা প্রকল্পের কাজ করাচ্ছেন। প্রকল্পে শ্রমিকের উপস্থিতি কমের কথা স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল আমিন মন্ডল টিটু বলেন, এখন ধান কাটার সময় তাই শ্রমিক সংকট। আর এত কম টাকায় শ্রমিক পাওয়া যায় না।

এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।