মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস যেন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য

348

মোঃ জাকির হোসেন:শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ভুমি অফিস অনিয়ম দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে । জমি খারিজ সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিতে দিনের পর দিন হয়রানীর সাথে গুনতে হচ্ছে ঘুষের টাকা। বর্তমান তহশীলদার মোঃ রাজিবুর রহমান(আপেল)যোগদানের পর থেকেই রাম রাজত্ব চলছে এ অফিসে।রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।পদেপদে বাড়তি টাকা না দিলে কোন সেবাই মিলছে না মির্জাপুর ভুমি অফিসে। জমি খারিজ ও প্রয়োজনীয় কাগজ নিতে দিনের পর দিন হয়রানীর সাথে রয়েছে এখানে নানা ভোগান্তি। ভুক্তভুগীদের অভিযোগ ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে জমি খারিজ পাওয়ার বিধান থাকলেও এখানে ৫ থেকে ৬ মাস ধরে নানা অজুহাতে আটকে রাখা হচ্ছে ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত প্রায় ২ বছর ধরে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কাছ থেকে এভাবেই অবৈধভাবে টাকা নিয়ে জমির খাজনা খারিজ করছেন মির্জাপুর ইউনিয়ন উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান। কেউ টাকা না দিতে পারলে জমি খারিজের কাগজপত্র নেননা তিনি। এমনই এক ভুক্তভোগী মাকরকোলা গ্রামের মৃত তছির উদ্দিনের ছেলে গোলাম রব্বানী। তিনি গত জানুয়ারী মাসে মাকরকোলা মৌজার ৯৯ শতক জমি খারিজ করতে গিয়েছিলেন মির্জাপুর ভূমি অফিসে। তার ১৭ শতক জমি অন্য দাগে থাকায় উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সেই জমি খারিজ করতে তাকে ৪ দিন ঘুরিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। গোলাম রব্বানী টাকা দিতে না পারায় খারিজের আবেদন নেননি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা। টাকার অভাবে এখন পর্যন্ত তার জমি খারিজ করতে পারেনি। এ ব্যাপারে গোলাম রব্বানী বলেন, টাকা দিতে না পারায় এই নায়েব আমারে সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে। উনি থাকতে আমি জমি খারিজ করতে পারবোনা। এভাবে চলতে থাকলে এখানকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মির্জাপুর ইউনিয়নের তালতা গ্রামের আব্দুল মান্নান মাকেজ বলেন, তিনি বীর গ্রামের আব্দুর রহিম মাস্টারের ছেলে বকুলের সাথে মাথাইলচাপড় মৌজার ৬২ শতক জমি খারিজ করতে গিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে নায়েব রাজিবুর রহমান আপেল ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিসের জন্য ২০ হাজার টাকা লাগবে জানতে চাইলে এসিল্যান্ডকে ১২ হাজার টাকা দিতে হবে এবং অন্যান্য খরচ আছে বলে তিনি তাকে জানান। অথচ পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা. সাবরিনা শারমিনের কাছে গেলে শুধুমাত্র ডিসিআরের টাকা জমা দিয়েই তার খারিজের কাজ হয়ে গেছে। সরাসরি এসিল্যান্ড অফিসে যাওয়ায় মির্জাপুরের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কেস নাম্বার ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে দিয়েছিল যাতে ফাইল খুজে না পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর দক্ষিনপাড়া গ্রামের মোজাহার আলী শেখের ছেলে আব্দুর রহিম জানান, তার ছোট ভাই সুকুমুদ্দিনের ১৩ শতক জমি খারিজের বিপরীতে এই নায়েব তার কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা নিয়েছে। কিসের জন্য নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এতোকিছু আপনার জানার প্রয়োজন নেই। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মৃত মনসব প্রামানিকের ছেলে খাজেল উদ্দিন প্রামানিক, ঘোলাগাড়ি গ্রামের আলহাজ্ব সিদ্দিক মন্ডলের মেয়ে ছবিলা খাতুন, তালতা গ্রামের ফজলুল হক, জুরান শেখ সহ অসংখ্য সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

দালাল নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে খাজনা খারিজের নয় ছয়ের খেলায় অফিসের এই কর্মকর্তা দুই তিনজন বহিরাগত দিয়েও টাকা লেনদেন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব অনিয়ম কে নিয়মে পরিনত করা তার কাজ বলে একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম নবী বাদশা বলেন, সরকার দলীয় নেতা হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ আমার কাছে আসে। বিষয়গুলো নিয়ে মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে বর্তমান নায়েব আমার সাথেও অসৌজন্যমুলক আচরণ করেছেন। তার কথা মতে তিনি জেলা প্রশাসকের চাইতেও অনেক বড়। তিনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই কাজ করে নিতে হবে।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর ইউনিয়ন উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান আপেল বলেন, এসকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যাদের কাজ করে দিয়েছি তাদের কোন সমস্যা নেই। কাগজপত্র সমস্যার কারণে যাদের কাজ করতে পারিনি তাদেরই এমন সমস্যা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ময়নুল ইসলাম বলেন, সাধারন মানুষ যেন হয়রানির স্বীকার না হয় এজন্য সরকার এখন অনলাইনে আবেদন করার সূজোগ করে দিয়েছেন। এলাকার জনপ্রতিনিধি,সচেতন মানুষ এবং সংবাদকর্মী সকলের উচিত এ বিষয়ে গনসচেতনতা তৈরি করতে হবে যেন নিজেরাই অনলাইনে আবেদন করেন তাহলেই দুর্নীতির সূযোগ কমে যাবে। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।