বগুড়ায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা তাকবীর হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন

260

স্টাফ রিপোর্টার

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  তাকবীর হত্যা মামলার মূল আসামীদের কেউ গ্রেফতার না হওয়ার ক্ষোভে পরিবার ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। রবিবার (৩০মে) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি নিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়।

মানববন্ধনে তাকবীরের বাবা জহুরুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, ‘আমি কী বলব? এই সাতমাথায় অনেক বক্তব্য দিয়েছি, সমাবেশ করেছি। আজও আমাকে দাঁড়াতে হয়েছে কেন?’

চিৎকার করে তিনি বলেন, ‘বগুড়াবাসী দাঁড়ান, দেখেন, শোনেন। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। গত ১১ মার্চ এই সাতমাথায় আমার ছেলেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কুপিয়ে জখম করেছে। ৫দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে মারা গেছে। আমি তো অনেকের বিচার চেয়েছি এই সাতমাথায়। আজ আপনারা আমার ছেলের হত্যার বিচার করে দিন। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমার ছেলের হত্যার বিচার করে দিন।

মানববন্ধনে তাকবীরের মা আফরোজা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে তো কোন দোষ করেনি, সে শুধু প্রকৃত রাজনীতি করতে চেয়েছিল। কিন্তু খুনী রউফ নেশা, চাঁদাবাজি সব ধরনের অপরাধ করত। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের প্রশ্রয় না পেয়ে রউফ এত বেপরোয়া হয়েছে। জলজ্যান্ত একটা ছেলেকে খুন করল। অথচ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। আফরোজা বেগম বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করছি, আমার ছেলের হত্যার বিচার দ্রুত ট্রাইবুন্যালে করা হোক।

মানববন্ধন সমাবেশে অংশ নেন সিপিবি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ। তিনি বলেন, গত ১১ মার্চ সাতমাথায় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবীর ইসলামকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এর কয়েকদিন পর তাকবীর মারা যান। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে তাকবীর হত্যাকারীদের নাম স্পষ্ট করে বলে গেছেন। তারপরও প্রশাসন এজাহারভুক্ত বা তাকবীরের বলে যাওয়া ব্যক্তিদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়েছে।

আমিনুল ফরিদ আরও বলেন, গত দুই মাসে বগুড়ায় আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি দেখা দিয়েছে। অনেকগুলো হামলা, হত্যাকাণ্ড হয়েছে। কিন্তু তার কয়টির ব্যবস্থা প্রশাসন নিতে পেরেছে।

বগুড়ার একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি এসবের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আহ্বান করেন। আর তাকবীর হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেন আমিনুল ফরিদ।

তাকবীর হত্যায় আওয়ামী লীগের কাছেই বিচার চান তার চাচাতো বোন নাবিলা।তার দাবি, তাকবীর আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। রাজনীতি করতে গিয়ে একই সংগঠনের আরেক নেতা প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে তাকবীরকে খুন করেন। আইন-আদালত ও প্রশাসনের বিচার পরে। আগে আমরা দেখতে চাই আওয়ামী লীগ কী বিচার করে। দলের একটি নষ্ট হয়ে যাওয়া কর্মীর বিচার কি হয় এটা সবার জানতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, সন্তানহারা বাবা-মা রোদে খরতাপে কেন রাস্তায় আসে তা আমরা বুঝি। যেখানে খুনিরা আড়াইমাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও গ্রেফতার হয় না। সেখানে হতাশা দেখা দিবে। বিচার প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা থাকবে। এ জন্য সুজনের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি- তাকবীর হত্যার বিচার দ্রুত ট্রাইবুন্যালে করা হোক।

মানববন্ধনে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মির্জা সেলিম, আব্দুল জলিল, ছাত্রলীগ কর্মী ও তাকবীরের ফুফাতো ভাই শাফি, তৌফিক প্রমুখ। এ ছাড়াও মানববন্ধনে আরও ৩০ জনের মত এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

তাকবীর ইসলাম জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত ১১ মার্চ দলের সভাপতি পদের প্রার্থিতার দ্বন্দ্বে এক হামলার শিকার হন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৬ মার্চ তিনি মারা যান। এ ঘটনায় বগুড়া আজিজুল হক কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ, জাহিদ, আনোয়ার, তারেকসহ একাধিক জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়। মৃত্যুর আগে তাকবীর এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ছাত্রলীগ নেতা রউফ আমাকে ছুরিকাঘাত করেছে।

আলোচিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বলেন, এই মামলায় একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতা রউফের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। রউফসহ অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।