বগুড়ায় সরকারি দু’টি হাসপাতালে ২০টি ন্যাজাল ক্যানোলা দিল এস আলম গ্রুপ

547

অনলাইন ডেস্ক

বগুড়ায় সরকারি দু’টি  হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য ২০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা (উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র) প্রদান করেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘এস আলম গ্রুপ’। ওই গ্রুপের পক্ষে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বগুড়া অঞ্চলের প্রধান আব্দুস সোবহান এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী অঞ্চলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিম উল্লাহ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরঞ্জামগুলো বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোহসিনের কাছে হস্তান্তর করেন।এদিকে শজিমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নতুন করে আরও ১০০ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে।

হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকটের কারণে করোনা বিশেষায়িত মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ ঘন্টায় ৭জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে পুণ্ড্রকথাসহ একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশ ও প্রচার হওয়ার পর পরই এগিয়ে আসে ‘এস আলম গ্রুপ’। ২৫০ শয্যার ওই হাসপাতলে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২২৬জন রোগী ভর্তি ছিল। তবে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় আর কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল চত্বরে এস আলম গ্রুপের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক, সিভিল সার্জন ডা. গাওসুল আজিম চৌধুরী, বগুড়া পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) বগুড়া জেলা শাখার সহ-সভাপতি ডা. আব্দুল হাকিম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ বগুড়ার সভাপতি ডা. সামির হোসেন মিশু এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল উপস্থিত ছিলেন।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় সংকটময় মুহুর্তে ১০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা উপহার হিসেবে প্রদান করায় ‘এস আলম গ্রুপ’-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, সরঞ্জামগুলো সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন রক্ষায় সহায়ক হবে। সরঞ্জামগুলো শনিবারের মধ্যেই সংযোজনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো চালু করার জন্য প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেছেন। নতুন ১০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংযোজন করা গেলে হাসপাতালের আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ইউনিটটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। কারণ ওই আইসিইউ ইউনিটটি ৮ শয্যার হলেও সেখানে এর আগে মাত্র ২টি ন্যাজাল ক্যানোলা ছিল। যে কারণে অন্য রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল প্রধান ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, এই হাসপাতালের জন্য কেন্দ্রীয় ঔষাধাগারে আরও ১০টি ন্যাজাল ক্যানোলা চাওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এ সপ্তাহের মধ্যেই সেগুলো পৌঁছে যাবে। তখন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার সক্ষমতা আরও বাড়বে।

বগুড়ার ২৫০শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। তখন সেখানে সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হতো। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়লে একই বছরের জুনের শেষ দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়। পরবর্তীতে শজিমেক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানেও রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হয়।

তবে হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু হলেও সবগুলো শয্যায় উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এতদিনেও প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে সেখানে ভর্তি দুই শতাধিক রোগীকে হয় ফেস্ক মাস্ক অথবা রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ দিতে হয়।
করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল বলেন, ফেস্ক মাস্ক দিয়ে একজন করোনা রোগীকে প্রতি মিনিটে মাত্র ৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব। অন্যদিকে রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। আর হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে একজন রোগীকে প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যায়।

ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর ওপরে কেবল তাদের ফেস্ক মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর নিচে কিন্তু ৮৭ এর ওপরে তাদের রিব্রিদার মাস্ক দিয়েও সুস্থ করে তোলা যায়। তবে যাদের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৭-এর নিচে তাদের জন্য অবশ্যই উচ্চ মাত্রার অর্থাৎ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাযুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন। তাছাড়া তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

অপরদিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, উপহার হিসেবে পাওয়া ১০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংযোজন করা গেলে ওই হাসপাতালের মোট ২২টি শয্যায় উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে। শজিমেকের ১০০ শয্যার করোনা ইউনিটে শনিবার সকাল পর্যন্ত ১০২জনের ভর্তির তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আরও ১০০ শয্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রোববার থেকেই সেখানে রোগী ভর্তি শুরু করা হবে। সুত্র পুণ্ড্রকথা।