নওগাঁয় প্রতিবন্ধী শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে নাইট গার্ড আটক

169

সজীব হাসান নওগাঁ থেকে।

নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রতিবন্ধী শিশুকে নির্যাতনের পর হাত পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটক রাখার ঘটনায় বকুল(৫০) নামের একজন নাইট গার্ড আটক এবং অসহায় পরিবারটির পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়াল নওগাঁ জেলা পুলিশ

গতকাল ৩০ জুলাই শুক্রবার সকাল ১০ টায় নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার বাগাচারা গ্রামে নির্মাণাধীন একটি এলপিজি অটো গ্যাস স্টেশনে মোবাইল ফোনের সিম চুরির অপবাদে এক প্রতিবন্ধী শিশুকে মারপিট করে হাত পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটক করে রাখার দায়ে বকুল(৫০) নামের একজন নাইট গার্ডকে আটক করেছে মহাদেবপুর থানা পুলিশ। বাগাচারা গ্রামের ভ্যান চালক খোরশেদের একমাত্র ছেলে প্রতিবন্ধী শিশু(১৫) স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। অন্নদিকে নওগাঁ সদরের শিকারপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে বকুল প্রায় দুই মাস পূর্বে নির্মাণাধীন বাগাচারা এলপিজি অটো গ্যাস স্টেশনে নাইট গার্ড এর চাকরি নেই। শিশুটি প্রায়ই নির্মাণাধীন ঐ গ্যাস স্টেশনে গিয়ে বকুলের সাথে গল্প করত। মাঝে মাঝে সে বকুলের মোবাইলও ঠিক করে দিত। ঘটনার দিন সকাল দশ টার দিকে শিশুটি এবং প্রতিবেশী অপর এক শিশুসহ ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার পথে বকুল তাদের ডেকে তার মোবাইল থেকে নম্বর বের করে দিতে বললে শিশুটি মোবাইল নিয়ে দেখে তাতে সিম নেই। বকুল ঐ শিশুকেই সিম চুরির দায়ে অভিযুক্ত করে বকুলের থাকার জন্য নির্মিত একটি টিনের বেড়ার ঘরের মধ্যে রেখে অপর শিশুকে পাঠিয়ে দেই। এরপর বকুল শিশুটিকে লোহার রড দিয়ে মারপিট করার পর রশি এবং তার দিয়ে হাত পা বেঁধে ঘরের মধ্যে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে বকুল শিশুটির বাড়ীতে গিয়ে তার মাকে বলে যে তার ছেলে তার সিম চুরি করেছে। শিশুটির মা বকুলকে তার ছেলে কোথায় তা জিজ্ঞেস করে। তার কথায় সন্দেহ হলে শিশুটির ফুফু তার পিছে পিছে যায়। বকুল ঘরের তালা খুলতে টালবাহানা শুরু করলে শিশুটির ফুফু জানালা দিয়ে দেখে যে শিশুটি হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। তখন সে চিৎকার শুরু করলে বকুল কৌশলে পালিয়ে যায়। মূহুর্তে সেখানে শত শত লোক উপস্থিত হয়। উত্তেজিত জনতা ঘরের তালা ভেঙে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আহত শিশুটিকে উদ্ধার করে।

নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার প্রকৌশলী জনাব আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম বিষয়টি জানতে পেরে সাথে সাথেই মহাদেবপুর থানা পুলিশকে সেখানে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে জনগণের সহায়তায় বকুলকে আটক করলে উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়। পুলিশ দ্রুত আহত শিশুকে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
করোনাকালীন সময়ে গরীব ভ্যান চালক বাবার পক্ষে সংসার চালানোই কঠিন সেখানে আবার আহত সন্তানের চিকিৎসার কথা ভেবে শিশুটির বাবা অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানতে পেরে মানবিক পুলিশ সুপার প্রকৌশলী জনাব আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম আহত শিশুটির চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেন এবং আর্থিক সহায়তাসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহাদেবপুর সার্কেল এটিএম মাইনুল ইসলাম ও মহাদেবপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) আবুল কালাম আজাদকে ভিকটিম ও তার পরিবারের নিকট পাঠান।
আটক বকুলের বিরুদ্ধে শিশুটির বাবা খোরশেদ আলম বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।