বেড়েছে লকডাউনের মেয়াদ: সেইসাথে শেরপুরে যানবাহন এবং মানুষের ভিড়

228

মোঃ জাকির হোসেন শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন সত্ত্বেও বেড়েছে যানবাহন এবং মানুষের ভিড়। নতুন করে লক ডাউনের মেয়াদ না বাড়ালে আজ শেষ হয়ে যেত সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ যা শেষদিকে এসে অনেকটাই ঢিলেঢালা হয়ে গেছে।

সরকার এই কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে অথচ, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জনসাধারণ প্রয়োজনে যেমন ঘর থেকে বের হচ্ছে, তেমনি বিনা কারণেও বের হচ্ছে। প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন না চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল,অটোরিকশা, সবুজ সিএনজি, অটোভ্যান অবাধে চলাচল করছে। পৌর শহরের মার্কেটগুলোতে প্রধান ফটক বন্ধ দেখালেও ভিতরে চলছে কেনা-বেচা। অনেকেই চাবি হাতে দাঁড়িয়ে বাইরে ক্রেতাদের আগমন ঘটলেই তারা দোকানে চলেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট)
দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে লকডাউনের এমনি চিত্র দেখা গেছে। তবে গণপরিবহন চালাচল না করলেও মহাসড়কের উন্নয়নমূলক কাজ চলার কারণে গাড়িদহ ও মহিপুর এলাকায় চিরচারিত যানজট দেখা যাচ্ছে ।

শেরপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ব্যাংকে ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে এসেছেন একজন ব্যাংকার। সিএনজিতে আসলে ১০টাকা খরচ হতো। তবে ব্যক্তিগত শারীরিক নিরাপত্তার স্বার্থেই রিকশায় আসা।
তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে অফিসে আসার পথে গাড়িদহ দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামারের সামনে হাইওয়ে পুলিশের চেকপোস্ট আছে। চলমান লকডাউনের শুরুর দিকে এই চেকপোস্টে বেশ কড়াকড়ি ছিল। এখন আর কোনো কড়াকড়ি নেই। রিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল সবকিছু অবাধে চেকপোস্ট পার হয়ে যাচ্ছে।’
আরেকজন ব্যাংকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকে চাকরি করার কারণে নিয়মিত অফিসে আসতে হয়। রিক্সা বা অটোতে অটোরিক্সাতে চলাফেরা করছি এখনো কোথাও কোনো সমস্যায় পরিনি।’
তিনি বলেন, ‘চলমান লকডাউনের শুরুর দিকে রাস্তায় মানুষের চলাচল তুলনামূলক অনেক কম ছিল। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে মানুষের চলাচল তত বাড়ছে। তবে বাস না চলায় রাস্তায় তেমন যানজট নেই। অল্প সময়ের মধ্যেই অফিসে চলে আসতে পারি এবং বাসায় ফিরতে পারি।’

মির্জাপুর থেকে থেকে রিকশায় উপজেলা সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতে আসা একজন বলেন, ‘রাস্তায় সবকিছুই চলছে, শুধু গণপরিবহন চলছে না। এতে আমাদের মতো স্বল্প বেতনের কর্মীদের কষ্ট হচ্ছে। গণপরিবহন চালু থাকলে ৫ টাকা দিয়েই অফিসে আসতে পারি। এখন রিকশায় ২০/৩০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চললে বেতনের বেশিরভাগ টাকা রিকশা ভাড়া বাবদ চলে যাবে।’

শেরপুর বাস স্ট্যান্ডে কথা হয় রিকশাচালক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের শুরুর দিকে তেমন ভাড়া পেতাম না। দুদিন ধরে একটু বেশি ভাড়া পাচ্ছি। তবে স্বাভাবিক সময় থেকে এখন অনেক কম আয় হচ্ছে। দিনে ৪০০ টাকা ভাড়া মারায় কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে অর্ধেক বেলাতেই ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া পেতাম।’

তিনি বলেন, ‘চলমান লকডাইনের প্রথমদিকে মাঝে-মধ্যে পুলিশ হয়রানি করতো। ভয়ে ভয়ে রিকশা চালাতাম। কয়েকদিন ধরে পুলিশ কিছু বলে না। যাত্রী নিয়ে সহজেই রাস্তায় চলাচল করতে পারছি। আগের তুলনায় রাস্তায় মানুষের যাতায়াত অনেক বেড়েছে। শেরপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগের তুলনায় এখন রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়েছে, এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখন ছোটখাটো অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে মানুষের চলাচল বাড়বে। স্বাভাবিক সময়ের মতো যানজট নিয়ন্ত্রণে আমাদের হয়তো অত বেগ পেতে হয় না, কিন্তু নিয়মিতই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ এই মোড়ের সব রাস্তাতেই গাড়ি চলাচল করছে।’
প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল যেমন বেড়েছে তেমনি মহিপুর বাজার, গাড়িদহ বাজার, শেরুয়া বটতলা, বাসষ্ট্যান্ড এলাকায়, বিকেল বাজার, নবমী সিনেমাহলের সামনে মানুষের চলাচল বেড়েছে যার একটি বড় অংশই অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে।
আর কাঁচাবাজারগুলোতে মানুষের ভিড় লেগে থাকা অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
রেজিস্ট্রি অফিস কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষের প্রচণ্ড ভিড়। রাস্তার দুই ধারে বসা বাজারটিতে এতটাই ভিড় যে রাস্তা দিয়ে যেতেও অন্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করতে হচ্ছে। আর দোকানগুলোতে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা পণ্য কিনছে। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। সবজি ক্রেতা মিন্টু নামের একজন বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এই বাজারে এমন ভিড় হয়। এটা এখানকার নিয়মিত ঘটনা। কেউ কিছু বলে না। কারণ সবাই এখানে প্রয়োজনেই আসে। মাঝে মাঝে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানও পরিচালনা করেন।’