শেরপুরে মৌসুমের শুরুতেই সার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের ফাঁদে কৃষক

126

মোঃ জাকির হোসেন শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার শেরপুরে চলতি আমন মৌসুমের শুরুতেই সারের সংকটের গুজব ছড়িয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে স্যারের স্বল্পতা দেখিয়ে মুনাফা লুটে যাচ্ছে বগুড়ার শেরপুরের অসাধু সার ব্যবসায়ী। ফলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে কৃষক। এই সিন্ডিকেটের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপজেলার অন্তত চল্লিশ হাজার কৃষক পরিবার।

ব্যবসায়ীদের এমন সিন্ডিকেটের কারণে আমন ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত দুই-তিনদিন ধরেই স্থানীয় বাজারে সার সংকটের কথা জানিয়েছেন আমন চাষীরা। এদিকে সহজলভ্যে সার প্রাপ্তিতে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বাজার মনিটরিং নেই বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী কৃষকরা।

প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, আমন মৌসুমে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন সার নেই। তাছাড়া সারের সংকটের কথা বলে দাম বেশি নিচ্ছে সার ব্যবসায়ীরা। অথচ সরকারি বিধিমোতাবেক প্রতিটি ডিলারের দোকানগুলোর নির্ধারিত স্থানে সারের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখার আবশ্যকতা থাকলেও সেটি করা হচ্ছে না এবং মানা হচ্ছে না বিক্রয় বিধিমালা। প্রতিবস্তা ইউরিয়া সরকার নির্ধারিত দাম ৮’শ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ৯’শ থেকে ৯৫০টাকা, ১১’শ টাকার টিএসপি ১২’শ থেকে ১২৫০টাকা, ৭৫০টাকার এমওপি ৯’শটাকা ও ৮’শ টাকার ড্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৯’শ থেকে ১ হাজার টাকায়।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে ২০হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। আর দু-একদিনের মধ্যে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় এনেই চাহিদার বিপরীতে সরকারিভাবে সারের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক পর্যায়ক্রমে বিসিআইসি ১২জন এবং বিএডিসির ২১জন ডিলার চাহিদা অনুযায়ী সার উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। এখানে সারের কোনো সংকট নেই। অথচ স্থানীয় কৃষকদের মাঝে পরিকল্পিতভাবে সার সংকটের গুজব ছড়ানো হয়েছে। ফলে সার কেনার জন্য কৃষক মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা হন্যে হয়ে দোকানে দোকানে ঘুরছেন। সার নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে।

উপজেলার কয়েকজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, কতিপয় ডিলার-ব্যবসায়ী ও খুচরা সার বিক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মূলত তারাই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইউরিয়া, টিএসসি, ডিএপিসহ সব ধরণের সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রতি বস্তা সারে ইচ্ছে মাফিক দাম নিয়ে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছে। এভাবে প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটটি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে রয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাথাইলচাপড় গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম, ইউনুস আলী, আশরাফ আলী বলেন, শাহ বন্দেগি ইউনিয়নের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন জমিতে সার দেওয়ার এখন উপযুক্ত সময়। তবে সার কেনার জন্য বুধবার (১৮আগস্ট) একাধিক দোকানে গেলে প্রথমে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে কোনো সার নেই বলে জানিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত প্রতিবস্তায় ১০০-২০০টাকা দিলেই সার পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে গোলাম রসুল নামের একজন প্রান্তিক চাষী বলেন, আমন মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। জমি থেকে আগাছা ও ঘাস মারার কীটনাশক চারা রোপনের আট থেকে দশদিনের মধ্যে ইউরিয়া সারের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। কিন্তু পনের দিন পার হয়ে গেলেও ইউরিয়া সার সংগ্রহ করতে পারিনি।
তবে কৃষকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সার ব্যবসায়ী ও ডিলাররা বলেন, বগুড়া বাপার গোডাউন থেকে চাহিদার তুলনায় সার সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই সারের এই সংকট তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই। এছাড়া সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কোনো বাড়তি টাকায় সার বিক্রি করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তারা।

শেরপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ছামিদুল ইসলাম জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইউরিয়া বিক্রি করা অন্যায়। চলতি আগস্ট মাসে ইউরিয়া সারের বরাদ্দ রয়েছে ৯০৭ মেট্রিকটন। মঙ্গলবার পর্যন্ত কেবল ২৬০ মেট্রিকটন উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি সার এখনও উত্তোলনই হয়নি। তাই সারের কোনো সংকট নেই।

এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে সারের কোনো সংকট নেই। এরপরও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।