সোনাতলায় কথিত ′′পীর মা′′ জেলি বেগমের মাজার কান্ড!

402

শাফায়াত সজল, সোনাতলা থেকে ফিরেঃ জেলি বেগম!! তার ভাষ্যমতে, অনেকদিন ধরেই তিনি নাকি অসুস্থ। হঠাৎ তিনি স্বপ্নে দেখলেন সুলতান বলখী (র) তাকে বলছেন, তার বাড়ির সামনে নাকি মাজার আছে!! যা বর্তমানে মাটির নীচে ঢাকা পড়ে আছে। জেলীকে তিনি মাজারটি নতুন করে ইট পাথর দিয়ে করার জন্য হুকুম দিয়েছেন। যদি তিনি তা না করেন তাহলে জেলি বেগম কখনোই সুস্থ হবে না!! স্বপ্নটি দেখেন তিনি গত বুধবার (২৫-০৮-২১) দিবাগত রাত্রে। তারপর যখন তিনি ১ রাতের মধ্যেই অর্থাৎ শুক্রবারের মধ্যেই মাজারটি তৈরী করলেন তারপর থেকেই তিনি নাকি সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন কোন প্রকার ডাক্তার দেখানো আর ঔষধ সেবন ছাড়ায়!! কি ভাবছেন পাঠক?? হুম এই সব আজগুবী অবাস্তব কথা গুলোই গড়গর করে বলে যাচ্ছিলো নতুন “পীর মা” জেলি বেগম।

আজ সোমবার সকালে এই প্রতিবেদক জানতে পারে বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মহিচরণ দক্ষিনপাড়া (ছেওটাপাড়া) তে রাতারাতি মাজার তৈরী করে চলছে জিকিরের নামে ধর্ম ব্যবসা। শুরু হলো অনুসন্ধান। নিউজের জন্য ছদ্মবেশে মানত পুরণ করার উদ্দ্যেশ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা যায় মহিচরণ বাজার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার তেলিআটা রাস্তার দিকে আসতে নিয়েই বাম পাশে এই মাজার। সবে কাজ শুরু হয়েছে মাজারের। বাড়ির সামনে রাস্তা সংলগ্ন মাজারটি ইটের গাথুনি দিয়ে মাজারের আকৃতি দিয়েই বানানো। হয়নি শুধু পোলেস্টারার কাজ। বাকী আছে দানবাক্স বানানোও। কথিত মাজারের উপরে যেন পানি না পড়ে সেজন্য টানানো আছে নীল রঙের পলিথিন।

বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে থামতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো কথিত খাদেম সাহেব। সালাম বিনিময় ও পরিচয় পর্ব শেষে শোনালেন পীর মা এর কেরামতির গল্প। তারপর উদ্দ্যেশ্য জানতে চান তিনি। উত্তরে মানত করা হয়েছে শুনে খুশি হলেন। নিয়ে গেলেন বাড়ির ভেতরে৷ বসালেন একটি কক্ষের ভেতরে, দিলেন চেয়ার। ইতিমধ্যে কথিত সেই ” পীর মা” এসে হাজির। তার বক্তব্যের কিছু নিউজের প্রথমেই উল্লেখ করেছি। তিনি জানতে চাইলেন কি মানত করেছি?? উত্তরে বলা হলো, মুরগী। কিন্তু এখন আপাতত দান বাক্সে কিছু দিতে চাওয়া হলো। কিন্তু জানা গেলো, দানবাক্স এখনো তৈরী করা হয়নি তবে হবে। যারা মাজার দেখতে আসে তারা নাকি “পীর মা” এর হাতেই দিয়ে যান যার যতটুকু সামর্থ্য।

প্রতিবেদকরা সামর্থ্যমত ৯০ টাকা প্রদানের পর মাজারের সামনে গিয়ে খাদেম সাহেব দোয়া করলেন। তার মোনাজাতের মধ্য শাহ সুলতান বলখী সাহেব এইখানে শুয়ে আছেন বিধায় শুকরিয়াও আদায় করলেন!! এইভাবেই চলছে ধর্মকে পুঁজি করে মাজার ব্যবসা। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সহজ সরল গ্রামের মানুষ গুলো।

এব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ” হুট করে এইখানে আমরা দেখি মাজার হলো। আমরা ছোট থেকে বড় হলাম কখনো অইখানে মাজার বা কিছু দেখিনি”।
গনিয়ারীকান্দী বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, ” ধর্মকে সামনে রেখে মাজার ব্যবসা ইসলামে জায়েজ নেই। এটি অন্যায় ও অপরাধ। মাজারকে কেন্দ্র করে সেজদা দেওয়া শিরক। আমরা কখনোই দেখিনি যে, অইখানে মাজার আছে। এইটি সম্পুর্ণ ইসলামের শরিয়ত পরিপন্থি”।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদকে বারবার ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে দিগদাইড় ইউপি চেয়ারম্যান আলী তৈয়ব শামিম জানান, ” এই ব্যাপারে আমি কিছুই শুনিনি। এর আগেও বুড়োর দরগা নামক জায়গায় কিছু ব্যক্তি মাজার ব্যবসা করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি স্থানীয়দের সহযোগিতার তা হতে দেইনি। এই খবরটিও আপনার মাধ্যমে প্রথম জানলাম, খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো”।

সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন ,” বিষয়টি কেউ আমাকে বলেনি, এইমাত্র আমি শুনলাম। ঘটনার সত্যতা পাইলে অবশ্যই সকলের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে”। সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিনকে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান,” ঘটনাটি আপনার মাধ্যমেই জানলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কেউ যদি এমন অপকর্মের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে”।