শেরপুরের কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য

225

মোঃ জাকির হোসেন শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার
কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ ব‍্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। তাই করোনার ছুটি উপেক্ষা করে তরিঘরি করে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে দেয়া হয়েছে তিনটি পদে নিয়োগ।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, গত ৪ জুলাই নিরাপত্তাকর্মী, পরিছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক সহ তিনটি সৃষ্ট পদের জন‍্য দরখাস্ত আহ্বান করে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ। তিনটি পদের বিপরীতে অন্তত চব্বিশ জন চাকুরী প্রত‍্যাশী আবেদন করেন। যাচাইবাছাই করে ২০ জনকে চাকুরী’র লিখিত পরিক্ষার পরিক্ষার্থী হিসাবে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করে ২১ আগষ্ট লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষার দিনক্ষন নির্ধারণ করেন নিয়োগ কমিটি।

পাশাপাশি চাকুরী প্রত‍্যাশীদের সাথে দরদাম শুরু করেন এই বিদ‍্যালয়ের ব‍্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বিশালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম আহম্মেদ ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ কমিটির সভাপতি শামিম আহম্মেদের ভাগ্নে একই ইউনিয়নের সিংড়াপাড়া গ্রামের মোঃ রঞ্জু মিয়া’কে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়। একইভাবে নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ দিতে নিয়োগ কমিটির সভাপতি শামিম আহম্মেদের চাচাতো ভাই কচুয়াপাড়া গ্রামের মোঃ কাওসার আহম্মেদ’কে নিয়োগ দিতে আসস্ত করা হয়। পরিছন্নতাকর্মী পদেও নিয়োগ পাইয়ে দিতে নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব। অর্থনৈতিক লেনদেনের খবর ফাঁস হওয়ার ফলে চাকুরী প্রত‍্যাশীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীদের সাথে ভারাটিয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে গত ২১ আগষ্ট লোক দেখানো একটি লিখিত ও মৌখিক নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহনের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে অফিস সহায়ক পদে চাকুরী প্রত‍্যাশী মেহেদী হাসানের পিতা আবুল কালাম আজাদ জানান আমার (আজাদ) ছেলেকে চাকুরী দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদ‍্যালয় ব‍্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তার লোক দিয়ে অগ্রিম টাকা গ্রহন করেন। নিয়োগ পরিক্ষার এক সপ্তাহ আগে শুনলাম অফিস সহায়ক পদে অধিক টাকার বিনিময়ে অন‍্য একজনকে নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়েছে। তবে তারা আমার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। কথা হয় অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া মোঃ রঞ্জু মিয়া’র সাথে তিনি জানান, নিয়োগপত্র হাতে না পেলেও আগামী মাসে তিনি কাজে যোগ দিবেন। রঞ্জু মিয়া আরো জানান, সভাপতি’র সাথে টাকা লেনদেন করেছেন তার পিতা আঃ লতিফ। এই প্রতিবেদন লেখা পযর্ন্ত পাঁচলাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে রঞ্জু নিশ্চিত করেছেন।কথা হয় নিরাপত্তাকর্মী পদে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া কাওসার আহম্মেদের সাথে। কাওসার জোর দাবী করে বলেন, সভাপতি শামিম আহম্মেদ তার চাচাতো ভাই হওয়ায় তিনি নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

বিশালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের এক দায়িত্বশীল নেতা ও জামাইল হাটখোলার এক ব‍্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদকে বলেন, কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ‍্যালয়ে ৩ টি পদে নিয়োগের বিনিময়ে অন্তত ২০ লক্ষ টাকার বানিজ‍্য করেছে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস‍্য সচিব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ‍্যালয়ের সদ‍্য সম্পন্ন নিয়োগ কমিটির সদস‍্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন বক্তব্য দেননি তবে সভাপতি শামিম আহম্মেদ বলেন, বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি দাবী করেন নিয়োগের বিনিময়ে কোন প্রকার অর্থ গ্রহন করা হয়নি।

এবিষয়ে শেরপুর উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।