ভিক্ষা নয় শিক্ষার স্বীকৃতি চায় শারীরিক প্রতিবন্ধী বিপ্লব

158

মোঃ জাকির হোসেন শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি

“Never Give Up” লেখা স্কিনপ্রিন্টের গোলগলা টি-শার্ট গায়ে বসেছিলো পড়ার টেবিলে। ঘরে ঢুকতেই সালাম দিয়ে নড়েচড়ে বসলো। ছোট ভাইকে চেয়ার আনতে বললো। কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আর ভাবলাম “Never Give Up” শব্দ তিনটির মূর্তমান প্রতীক আমার সামনে।তার দুটি হাতেই মাত্র একটি করে আঙ্গুল সদৃশ্য একটি অঙ্গ রয়েছে।দুটি পা’ও গোড়ালি পর্যন্ত, যা দিয়ে হাটাচলাতো দূরের কথা সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেনা।একটু হাটলেই পায়ে ঘা হয়ে যায়। তারপরও “ভিক্ষা নয় কাজ চাই” এমন কথা বলে নিজের ও পরিবারের পেট চালানোর জন্য কাজের সন্ধান করছেন জন্মলগ্ন থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ বিপ্লব হোসেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ভিক্ষা করে নয়;বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে জীবিকা অর্জন করতে চায় বিপ্লব। শিক্ষার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ তাক লাগিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসীকে। অনেকেই সুস্থ মানুষ হয়েও সমাজের জন্য বোঝা আবার শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও বিপ্লব সমাজের গর্ব।

সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা বিপ্লব তিন ভাইবোনের মধ্যে মেজো।বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই সরকারি শাহ সুলতান কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।আর বানিছ খামারকান্দি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শেরপুর টেকনিক্যাল এন্ড বি এম কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে স্থানীয় একটি কলেজের বি এ (পাশ) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রতিবন্ধীত্ব তাকে থামিয়ে দিতে পারেনি। বিপ্লবের বাবা মোঃফজলুল হক দিনমজুরের কাজ করে এবং মা মোছাঃবিলকিস খাতুন একজন গৃহবধু। বিপ্লবের বাবার আয় দিয়ে সংসার চলে না। তাই ছোট ভাই প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা এবং নিজের পড়ার খরচ চালায়।

পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, দরিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে সংসারে বড় হতে হয়েছেন তিনি। অভাবের কথা মনে করে জীবন সংগ্রামে পিছপা না হয়ে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এইচ এস সি পাশ করেও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিপ্লবের গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বিপ্লব একটা ভদ্র ও অভাবী পরিবারের শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান। শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও সে কখনও বসে থাকেনি। নিজের মত করে চলার জন্য সব সময় চেষ্টা করে পড়াশুনা করে চলেছে। কিন্ত এখন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারনে জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে পড়ছে ছেলেটি। তবে সে গরীব হলেও এলাকার মধ্যে সততা এবং অদম্য সাহসের এক বিরাট দৃষ্টান্ত। আমিও সরকার বা সমাজের বিত্তবান মানুষদের কাছে তাকে প্রতিষ্ঠিত করাত দাবী জানাই।

এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ময়নুল ইসলামের কাছে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার কোন সূযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি বিষয়টি জানতাম না, আমার পক্ষ থেকে অবশ্যই চেষ্টা করবো। জীবন সংসারে অসহায় এই বিপ্লবের এখন বড় চ্যালেঞ্জ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন এই বিপ্লব, সমাজের বিত্তবান মানুষদের কাছে ভিক্ষুকের মতো হাত পেতে আর্থিক সহযোগিতা নয় বরং বিপ্লব চায় তার শিক্ষার স্বীকৃতি। সে চায় সে একদিন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও সমাজের জন্য নিজেকে নিবেদিত করবে।