ইজিবাইক ছিনতাই টার্গেটে খুন, আদালতে স্বীকারোক্তি

47

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি:-
বগুড়ার নন্দীগ্রামে ধানক্ষেত থেকে লাশ উদ্ধারের ৯দিন পর ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্যই মুকুলকে হত্যা করে দুই বন্ধু আনোয়ার ও এমদাদুল। তাদেরকে সহযোগিতা করে আরও কয়েকজন। সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ছিনতাইকারী চক্রের টার্গেট ছিল ইজিবাইক। সুন্দরী নারীসঙ্গের প্রলোভনে সাড়া দিয়ে খুন হন ইজিবাইক চালক মুকুল হোসেন (৩৮)। জেলা গোয়েন্দা শাখা ও নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ দুই জেলায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাইকৃত সেই ইজিবাইক। গ্রেফতারকৃতদের গত রোববার বিকেলে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিনিয়া জাহানের আদালতে হাজির করা হলে হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া আনোয়ার হোসেন প্রামানিক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যা ও ছিনতাইয়ের বর্ণনা দিয়েছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর)নন্দীগ্রাম থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সংঘবদ্ধ চক্রের টার্গেট ছিল ইজিবাইক ছিনতাই। চালক মুকুলকে সুন্দরী নারীসঙ্গের প্রস্তাব দেয় তার দুই বন্ধু আনোয়ার ও এমদাদুল। কৌশলে তাকে খাওয়ানো হয় নেশাজাতীয় ও ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত যৌন উত্তেজক জিনসিং প্লাস। অচেতন অবস্থায় মুকুলকে ধানক্ষেতের পানিতে চুবিয়ে হত্যার পর লাশ ফেলে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। পরে তারা ইজিবাইক বিক্রি করে দেয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য যথাক্রমে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার তাঁতড়া পশ্চিমপাড়ার জাবেদ আলীর ছেলে এমদাদুল হক মিলন (৩৩), নাটোরের সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘী এলাকার শাহজাহান আলী শাহজামালের ছেলে আনোয়ার হোসেন প্রামানিক (৩৫), নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধানুরা মধ্যপাড়ার তজির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল জলিল সবুজ (৩২), গুরুদাসপুর উপজেলার পশ্চিম ধানুরার রমজান আলী কমলের ছেলে আব্দুস সোবহান (৪৬), ধানুরা ঘোষপাড়ার শাহাদৎ আলীর ছেলে ঝানটু ওরফে জন্টু ওরফে বেল্লাল (২৮) এবং রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উত্তর রায়পুর এলাকার ইছারুল হকের ছেলে নাজিরুল ইসলাম (৪৪)। এদের মধ্যে এমদাদুল হক মিলন শেরপুর উপজেলার টুনিপাড়া এলাকায় শশুর মৃত খোরশেদ আলমের বাড়িতে বসবাস করে এবং আনোয়ার হোসেন শেরপুরের হামচাপুর এলাকায় বসবাস করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নন্দীগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, ইজিবাইক চালক মুকুল হোসেন শাজাহানপুর উপজেলার খাদাশ এলাকার মৃত দুদু মন্ডলের ছেলে। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শেরপুরের হাটদিঘী পুকুর এলাকায় শশুরবাড়িতে থাকতেন। মুকুল ইজিবাইক চালানোর পাশাপাশি ধানের চাতালেও কাজ করতেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের চাকলমা থেকে কল্যাণনগর রাস্তারধারে ঠাকুরান পুকুর বড়চাপরা এলাকার ধানক্ষেতের পানিতে উপুর হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় ওই ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বগুড়া জেলা পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইজিবাইক ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। চালক মুকুলকে টার্গেট করে তার দুই বন্ধু আনোয়ার ও এমদাদুল। তারা দুজনই সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শেরপুরের ধুনট মোড়ে ওই চালককে নারীঙ্গের প্রস্তাব দেয় দুই বন্ধু। মুকুল সেই ফাঁদে পা দিয়ে দুই বন্ধুকে ইজিবাইকে নিয়ে খন্দকার টোলা মোড়ে যায়। শুভগাছা বাজারে গিয়ে তারা তিনটি যৌন উত্তেজক জিনসিং প্লাস ক্রয় করে। কৌশলে একটি বোতলে নেশাজাতীয় ও ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রণ করে ইজিবাইক চালক মুকুলকে খাওয়ানো হয়। সে ঘুমিয়ে পরলে তাকে ধরে পেছনে বসিয়ে দুই বন্ধু ইজিবাইক নিয়ে কাথম-কালিগঞ্জের রাস্তা দিয়ে চাকলমা বাজারে যায়। রাত ১০টার দিকে চাকলমা-কল্যাণনগর রাস্তারধারে গিয়ে ইজিবাইক থেকে অচেতন মুকুলকে নামিয়ে ধানের জমির আইলের ধারে পানিতে ফেলার পর সে নড়াচড়া করে। তখন ওই চালকের মাথা পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে লাশ ফেলে হত্যাকারীরা ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।