ধর্ষণ মামলায় তুফান সরকারের জামিন আদেশ বাতিল

277

বগুড়ায় কলেজ ভর্তিচ্ছু ছাত্রীকে বাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণের বহুল আলোচিত মামলার প্রধান আসামি ও শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকারের জামিন বাতিল হয়েছে।

রোববার প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক একেএম ফজলুল হক এ আদেশ দেন।

ভিকটিম ও মামলার বাদী তার মা আদালতে তুফান সরকারের পক্ষে কথা বলায় গত ১৭ জানুয়ারি তিনি জামিন লাভ করেন। তুফান ওই মা-মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার মামলাতে জামিন পেলেও দুদকের মামলায় জেলে আছেন।

প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি নরেশ মুখার্জ্জী এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্পেশাল পিপি নরেশ মুখার্জ্জী ও আদালত সূত্র জানায়, গত ১৭ জানুয়ারি আলোচিত ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ছিল। ভিকটিম ও তার মা (বাদী) ধর্ষণ এবং নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন। তুফানের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই বলেও আদালতকে অবহিত করেন। তাদের কাছে এজাহারে জোরপূর্বক সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল; ভুল বোঝাবুঝি থেকে মামলাটি হয়েছে বলে জানায় তারা।

শুনানি শেষে আদালত তার (তুফান) জামিন মঞ্জুর করেন। ছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতন মামলায় গ্রেফতারের পর থেকে তুফান সরকার জেলে আছেন। তার বিরুদ্ধে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মা-মেয়েকে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেওয়ার মামলা রয়েছে। অন্য সব আসামি জামিন আছেন। তুফান এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা থাকায় তিনি গত পৌনে চার বছর ধরে জেলে আছেন।

আদালত সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান আসামি তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী আপিল করলে ২৭ ফেব্রুয়ারি আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের আদেশ বহাল রাখেন। গত ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আলোচিত এ ধর্ষণ মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছিলেন।

অভিযুক্ত ১০ আসামির মধ্যে তুফান সরকার ছাড়া অন্যরা হলেন- তার স্ত্রী তাসমিন রহমান আশা, আশার বোন পৌরসভার কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি লাভলী রহমান রুমি, তুফান বাহিনীর সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, মুন্না, আলী আজম, মেহেদী হাসান রূপম, সামিউল হক শিমুল এবং এমারত আলম খান জিতু। তুফান ছাড়া সবাই দুটি মামলায় জামিনে আছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল মান্নাফ ও অন্যরা জানান, তাদের মক্কেল তুফান সরকার দুদকের মামলায় জেলে আছেন। ৭ মার্চ সাক্ষী গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সময় প্রার্থনা করায় আদালত ধর্ষণ মামলায় তুফান সরকারের জামিন বাতিল করে দেন।

বগুড়ায় দুদকের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জানান, তুফান সরকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত ৩৯ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের মামলায় জেলে আছেন। কয়েক দিন আগে এ মামলায় জামিন প্রার্থনা করলে স্পেশাল জজ নরেশ চন্দ্র সরকার তা নামঞ্জুর করেছেন।

তবে হত্যাসহ আরও ৩-৪টি মামলা থাকায় তুফান সহসা জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন জেলার এসএম মহিউদ্দিন হায়দার।

ধর্ষণের শিকার কলেজ ভর্তিচ্ছু ওই ছাত্রীর মা গত ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার নামে তুফান সরকার তার মেয়েকে শহরের চকসূত্রাপুরের বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তুফানের স্ত্রী, বোন, মা ও অন্যরা ভিকটিম এবং তার মাকে নির্যাতন করেন। পরে নাপিত ডেকে এনে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ পর্যায়ক্রমে তুফান সরকারসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে। তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগ থেকে এবং তার ভাই মতিন সরকারকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গ্রেফতারের পর অন্যরা জামিনে ছাড়া পেলেও তুফান সরকার এখনো জেলে আছেন।