কু-নাম করে সুনামগঞ্জের পথে দুর্নীতির বরপুত্র শিক্ষা কর্মকর্তা আঃ ছালাম

203

শাহারুল ইসলাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দুর্নীতির বরপুত্র গাইবান্ধার পলাশবাড়ী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) একেএম আঃ ছালামকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জে প্রশাসনিক বদলী করায় পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ পলাশবাড়ীবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দুর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) একেএম আঃ ছালাম এইউইও শফিকুল ইসলাম ও ইউডিএ আব্বাছ আলীর সহযোগিতায় মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অমান্য করে করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরেও স্লিপ ফান্ডের অর্থে তিন গুন বেশী দামে ভুয়া কোম্পানী থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ে প্রধান শিক্ষকদের বাধ্য করে প্রায় ৩০ লক্ষ, ৪টি প্রকল্পের ভ্যাট বাবদ সরকারি কোষাগারে ৭.৫% হারে টাকা জমা দিয়ে ১৫% টাকা কর্তন করে প্রায় ১৫ লক্ষ, ৫টি প্রতিষ্ঠানে ডাবল বরাদ্দ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ, ৬টি প্রতিষ্ঠানের অর্থ বরাদ্দ না দিয়েই প্রায় ৯ লক্ষ, প্রধান শিক্ষকদের টিএ বিল বাবদ প্রায় ৪ লক্ষ, শতাধিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের চেক দিতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ, সনদপত্র সংযুক্ত করতে প্রত্যেক শিক্ষকের নিকট থেকে ১ হাজার টাকা, চাকুরী স্থায়ীকরণে ৩’শ টাকা করে সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ সহ অফিস ফাঁকি,
বদলী বানিজ্য, শিক্ষক হয়রানি, স্বজন-প্রীতিসহ সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করে রেখেছে পলাশবাড়ী শিক্ষা অফিস। ওই কর্মকর্তা এতটাই ক্ষমতাধর যে তার এ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক মুখ খোলার সাহস পায় না।

শিক্ষকদের অভিযোগের পরি-প্রেক্ষিতে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিকগণ ইলেক্টনিক মিডিয়া ‘সময় টেলিভিশন’ সহ একাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন ও স্যোসাল মিডিয়ায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করলেও বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আমলে না নেয়ায় গত ১৬ নভেম্বর ২০২০ইং পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবের পক্ষে সহ-সভাপতি ফেরদাউছ মিয়া ও ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ইং বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষে সভাপতি মঞ্জুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক আঃ আজিজ মিয়া এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী পৃথকভাবে মন্ত্রনালয় ও মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ একাধিক দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন।

মহাপরিচালক অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপ-পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মির্জা মো. হাসান খসরু মহোদয়কে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ইং তদন্ত কার্য সম্পন্ন করেন।

তদন্ত রিপোট দেরি হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকরা সংক্ষুদ্ধ হয়ে গত ১০ ফেব্রয়ারী পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ সরকারি শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় সহস্রাধিক লোকজনের সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৫ দফা দাবী দিয়ে পলাশবাড়ী মহাসড়কের স্থানীয় চৌমাথা মোড়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রদান করা হয়।

এত কিছুর পরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না হওয়ায় ঘুষ বানিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠে ওই কর্মকর্তা।

এদিকে শিক্ষা অফিসারকে উপরোক্ত অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করার দায়ে সম্প্রতি অফিস সহকারি আসাদুল ইসলাম হ্যাপি’র বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় মামলা দায়ের করলেও মূল অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আঃ ছালামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহন করায় শিক্ষক সমাজসহ পলাশবাড়ীবাসী আশাহত হয়েছেন।

অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ৮ এপ্রিল ওই দুর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশাসনিক বদলীর চিঠি পলশবাড়ীতে পৌছিলে শিক্ষক সমাজসহ পলাশবাড়ীবাসীর মাঝে স্বস্তি নেমে আসলেও শংকাও কাটেনি, কারণ ওই কর্মকর্তার হাত নাকি অনেক লম্বা। তবুও পলাশবাড়ী বাসী সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সেই সাথে ওই কর্মকর্তার বিভাগীয় শাস্তি দাবী করেছেন।