শেরপুরে অনিয়মের প্রতিবাদে সোচ্চার সাধারণ দলিল লেখকরা, সমিতির অফিসে তালা

360

মোঃ জাকির হোসেন শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার শেরপুরের সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা,অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং অনিয়মের প্রতিবাদে সাধারণ দলিল লেখকদের তোপের মুখে মেয়াদপূর্ণ হওয়ার আগেই বগুড়ার শেরপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির কমিটি বিলুপ্ত করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল হট্টগোল, সশস্ত্র মহড়া ও হাতাহাতি হয়েছে। পরে সমিতির সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। সেইসঙ্গে সমিতির কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সোমবার (১৪জুন) দুপুরে দিকে শহরের খন্দকারপাড়াস্থ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস প্রাঙণে এই ঘটনা ঘটে। এদিকে এসব ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যা কোনো সময় ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাই সেখানে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ২০১৯ সালের ২৭ জুনে বাংলাদেশ দলিল লেখক (মহড়ার) সমিতির শেরপুর উপজেলা শাখার কমিটি গঠন করা হয় সিলেকশন এর মাধ্যমে। দুই বছরের জন্য গঠিত এই কার্যনিবাহী কমিটি সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। মেয়াদপূর্ণ হতে আরও এক বছর সময় বাকি রয়েছে। কিন্তু সমিতির কর্মকর্তারা নিজেরাই রেজুলেশন করে কমিটির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে তিন বছর করে নেয়। যার কারনে সাধারণ দলিল লেখকদের পক্ষ থেকে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি উঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা বলেন সরকারি ফি পৌরসভার বাহিরে সাড়ে ৬ পার্সেন্ট এবং পৌরসভার ভিতর সাড়ে ৭ পারসেন্ট অথচ সমিতির পক্ষ থেকে কখনো কখনো জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে ৯-১৩
পারসেন্ট হারে পর্যন্ত টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। এসকল দলিল লেখকরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সমিতির বিলুপ্তি চায়। রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থের অংশ প্রভাবশালী অনেকের পক্ষেই যায় বলে স্থানীয় সুধীজনেরা মনে করেন।
কিন্তু পূর্ব ঘোষণা ও সাধারণ সভার আয়োজন ছাড়াই রবিবার (১৩জুন) দুপুরে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন সমিতির সভাপতি এসএম ফেরদৌস। সেইসঙ্গে দীলিপ বসাককে আহবায়ক ও আতাউর রহমানকে যুগ্ম আহবায়ক করে এগারো সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। তবে এই আহবায়ক কমিটি গঠন ও ঘোষণাকে অবৈধ অখ্যায়িত করে তীব্র প্রতিবাদ জানান সরকার সমর্থক দলিল লেখকদের একটি অংশ। এসময় উপস্থিত দলিল লেখকরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
পরে তাদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আর এই ঘটনার জেরধরে সোমবার (১৪জুন) সকাল থেকেই সমিতির দখল নিতে শুরু হয় সশস্ত্র মহড়া। একপর্যায়ে সরকার সমর্থক দলিল লেখকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিবের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সমিতির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়াসহ সমিতির কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেন বলেও জানান তারা।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি এসএম ফেরদৌস বলেন, সাধারণ দলিল লেখকদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতেই মেয়াদপূর্ণ না হলেও কার্যনির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হবে। এছাড়া সমিতির সব কার্যক্রম বন্ধসহ কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনাটি শুনেছি। সেসময়ে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। তাই ঘটনাটি সম্পর্কে বেশিকিছু জানি না।
দলিল লেখক সমিতির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আতাউর রহমান বলেন, শতকরা পচানব্বই ভাগ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে তাদের আহবায়ক কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাই দায়িত্ব নিয়ে সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে সমিতি পরিচালনা ও আগামিতে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরই মধ্যে সোমবার দুপুরের দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমিতির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিয়ে সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বীয়া বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছিল। তাই সমিতির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ তৈরী হয়েছে। এরই জের ধরে গত দুইদিন যাবত সেখানে উত্তেজনা চলছে। তাই আইন শৃঙ্খলা যেন অবনতি না ঘটে, এজন্যই সেখানে পুলিশ রয়েছে বলে জানান তিনি।