হাসপাতালে ডাক্তারের টেবিলে কুকুরের ছবি ভাইরাল

252

অনলাইন ডেস্ক
অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন সুমন শেখ (৩৫) নামে এক যুবক। জরুরি বিভাগে এসে দেখেন ডাক্তার, নার্স বা কর্তব্যরত কেউই রুমে নেই। ডাক্তারের টেবিলের উপর শুয়ে আছে একটি নেড়ি কুকুর। এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন সুমন শেখ। পরবর্তীতে সুমন শেখ মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ আইডি থেকে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিটিতে দেখা যায়, ডাক্তারের টেবিলের উপরে উঠে একটি নেড়ি কুকুর ঘুমিয়ে রয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ছবিটি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের। গত রোববার (৮ আগস্ট) দিনগত রাত ১১টার দিকে সুমন শেখ ছবিটি মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

সুমন শেখ উপজেলার পিঞ্জুরী গ্রামের মৃত মইয়ার আলী শেখের ছেলে। এ ঘটনায় সুমন শেখসহ অনেকেই ওই রাতে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত বৈদ্য ফার্মাসিস্ট দীপক বিশ্বাস ও নৈশপ্রহরী হালিম শেখকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। সঠিক জবাব না দিলে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, ওই রাতে (৮ আগস্ট) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাজিয়া সুলতানা লোপা, ফার্মাসিস্ট দীপক বিশ্বাস ও নৈশপ্রহরী হালিম শেখ জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু জরুরি বিভাগে কেউ না থাকার কারণে একটি নেড়ি কুকুর চিকিৎসকের টেবিলের উপরে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে।

সুমন শেখ বলেন, গত রোববার দিনগত রাত ১১টার দিকে আমার অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসি। জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখি কেউ নেই। ডাক্তারের টেবিলের উপরে একটি কুকুর ঘুমিয়ে আছে। আমি তখন এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করি। এরপর অনেক ডাকাডাকির পরে ফার্মাসিস্ট দীপক বিশ্বাস ও নৈশপ্রহরী হালিম শেখ এসে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তারকে ডেকে আনেন। এরপর ডাক্তার রাজিয়া সুলতানা লোপা আমার শাশুড়ির চিকিৎসা করেন। আমি দায়িত্বে অবহেলাকারীদের শাস্তি দাবি করছি।

তিনি আরও বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্তব্যরত ব্যক্তিদের সকলের আচরণই খারাপ। এরা অধিকাংশ সময়ই রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এদের আচার-আচরণের কারণে অনেক রোগীই এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন না। আমরা চাই এরা সেবার মনোভাব নিয়ে আমাদের চিকিৎসা করুক।

ফার্মাসিস্ট দীপক বিশ্বাস বলেন, আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট পদে চাকরি করি। জনবল কম থাকার কারণে আমাকে জরুরি বিভাগে ডিউটি করতে হয়। ওই রাতে অল্প সময়ের জন্য আমি ও নৈশপ্রহরী হালিম শেখ জরুরি বিভাগের পাশে ১০২ নম্বর রুমে গিয়েছিলাম। এর ফাঁকে জরুরি বিভাগের টেবিলের উপর একটি কুকুর উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি এসে কুকুরটি দেখতে পেয়ে তাড়িয়ে দেই।

ডা. রাজিয়া সুলতানা লোপা বলেন, জরুরি বিভাগ দেখার দায়িত্ব ফার্মাসিস্ট ও নৈশপ্রহরীর। আমরা রাতে জরুরি বিভাগের পাশে ডাক্তারদের রুমে থাকি। রোগী এলে ফার্মাসিস্ট ও নৈশপ্রহরীরা আমাদের ডেকে নেয়। টেবিলের উপরে কুকুর উঠে ঘুমানোর বিষয়টি আমি দেখিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত বৈদ্য বলেন, জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাক্তারের টেবিলের উপরে কুকুর উঠে ঘুমানোর ছবিটি আমি দেখেছি। দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই রাতে কর্মরত ফার্মাসিস্ট দীপক বিশ্বাস ও নৈশপ্রহরী হালিম শেখকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা দুইজনে সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।