পলাশবাড়ীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে দই: জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

253

শাহারুল ইসলাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দইওয়ালা’ গল্পের দই নেবেন গো দই, ভালো দই! এমন হাঁক ডাক ছেড়ে পলাশবাড়ী উপজেলার মেঠোপথ ধরে গ্রাম-গঞ্জে বা হাট-বাজারে ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মিষ্টি দই। যা এখন মুদি দোকান, পান দোকান এবং কনফেকশনারী গুলোতে দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ঠুটিয়াপাকুর বাজারের সাদুল্লাপুর রোডে একটি, পৌরসভার ড্রীমল্যান্ডের সামন দিয়ে দূর্গাপুর নতুন বাজারে দিলিপের দিয়ামনি দই ঘর একটি, মহদীপুর ইউনিয়নের মহদীপুর হিন্দুপাড়ায় মানিকের দইয়ের কারখানা একটি, কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের নয়আনা নওদা গ্রামের পাপুলের রোদোশীল দই ঘর একটি। এ নিয়ে মোট ৪টি অনুমোদনবিহীন ভেজাল দই তৈরীর কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সাইনবোর্ড কিংবা দই কোম্পানির চিহ্ন বিহীন সরকারী অনুমোদন ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে এইসব ভেজাল দই। যা কোমলমতি শিশুদের মুখরোচক খাদ্য। উপজেলা জুড়ে বেশকিছু দই কারখানায় লেবেল ও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন নামে-বেনামে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে। পাইকারি ১১ টাকা, খুচরা ২০ টাকা, ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের হাড়ি দই এর পাইকারি দর ৬০ ও খুচরা ৮০ টাকা দরে কারাখানা থেকে এসব ভেজাল দই বিক্রি হচ্ছে।

এসব ভেজাল দই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ও হাট-বাজার ছাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে পাশ^বর্তী থানা সাদুল্লাপুর, পীরগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, সাঘাটা, ফুলছড়িসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায়। আর ক্রেতা হিসেবে সাধারণ মানুষ ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা না জেনে এসব ভেজাল দই খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা খালি গায়ে, হাতে নেই হ্যান্ড গ্লাবস, মাস্ক ও হেডক্যাপ, ধুলি বালিময় খোলা মেঝেতে সারি সারি মাটির হাড়িঁ, কড়াই ও প্লাস্টিকের বাজারজাত প্যাকেট বসানো। আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই অথচ এখানেই ঢালা হচ্ছে অপরিস্কার ও স্যাঁতস্যাতে দুর্গন্ধময় স্থানে দই তৈরির চিনি, পাউডার, বিষাক্ত ক্যামিকেল ও বিভিন্ন উপকরণ। এ সময় আরও দেখা যায়, ময়লা-গন্ধযুক্ত ড্রাম আর বড় বড় কড়াইয়ে মজুদ করা দুধ ও দইয়ে মাছির ভনভনানি, সেই সাথে সেখানে অসংখ্য মশা-মাছির উপদ্রুব।

ভেজাল কারখানা সম্পর্কে সচেতনমহল জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে গড়ে তোলা হয়েছে অনুমোদনহীন এসব অবৈধ প্রতারণামূলক ব্যবসা। দই কারাখানার আড়ালে খাদ্যের নামে এসব অখাদ্যের ব্যবসা উপজেলায় অনেক গজিয়েছে। তাদের দাবী অবিলম্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আর্কষণ করে এসব ভেজাল খাদ্য ও দই তৈরির কারখানা বন্ধের।

জানা যায়, অনেক ব্যবসায়িরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ হতে একটা ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই এসব ব্যবসা পাতে। তারা মনে করেন এটাই ব্যবসার লাইসেন্স পেলেন। আসলে ট্রেড লাইসেন্স মানে যে অবৈধ বা ভেজাল ব্যবসার পশরা খোলার অনুমোদন নয়। সেটা তারা মানতে নারাজ। মনে হয় অনেক চেয়ারম্যান মেম্বারও জানেন না বিষয়টি। না হলে যাচাই বাছাই ছাড়া কিভাবে একটা ভেজাল কারখানার ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় তা সচেতন মহলের প্রশ্ন জনপ্রতিনিধিদের প্রতি।

এ ব্যাপারে ঠুটিয়াপাকুরে অবস্থিত ইব্রাহিম দই কারখানার ম্যানেজার সহি সিল ছাড়া একটি বিএসটিআইয়ের কাগজ সাংবাদিকদের দেখান।
ভেজাল কারখানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, এসব খাবার নিরাপদ নয় এবং ক্ষতিকর। এসব কারাখানার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।