মহা ধুমধামে বগুড়ায় বট-পাকুড়ের বিয়ে: খেলেন পাঁচশত অতিথি!

182

স্টাফ রিপোর্টার রাশেদ

বগুড়া শহরের বিসিক মগলিশপুর এলাকায় করতোয়া সার্বজনীন শ্মশান ঘাটে মহা ধুমধাম করে দুই গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৫০০ মানুষ বিয়ের দাওয়াত খেয়েছেন বলেও জানা গেছে। আয়োজকদের দাবি, এতে গ্রামের মঙ্গল হবে। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় সেখানে নারায়ণ পূজার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বট গাছকে ‘বর’ ও পাকুড় গাছকে ‘কনে’ ধরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে বটের নাম রাখা হয় ‘অন্তর’। আর পাকুড়ের নাম রাখা হয় ‘রুপালী’। এই বিয়েতে পাকুড়ের বাবা-মা হয়েছিলেন শ্রী সুশীল চন্দ্র দাস ও প্রতিভা রানী দম্পতি। বটের বাবা হয়েছিলেন শ্রী নাথু রাম সরকার ও মা হয়েছিলেন চপলা রানী। স্থানীয়রা জানান, মগলিশপুর সার্বজনীন করতোয়া শ্মশান ঘাটে ১৬ বছর আগে পাশাপাশি গাছ দুটি লাগানো হয়েছিল। হিন্দু ধর্মমতে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হলে গ্রামের মানুষের মঙ্গল হয়। আমাদের পবিত্র গীতায়ও বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। অনেক আগ থেকেই এ ধরনের বিয়ের রীতির প্রচলন হয়ে আসছে। তাই এই রীতি মেনেই মানুষের মতো ঘটা করে মহা ধুমধামে তাদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিয়ে ঘিরে বর-কনের পাশে ছাদনাতলা সাজানো হয়। রঙিন কাগজে সাজানো হয় পুরো শ্মশান ঘাট। টাঙানো হয়েছিল সামিয়ানা। লাগানো হয় দৃষ্টিনন্দন লাইট। বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয় চারপাশ। হিন্দু রীতি অনুসারে কলাগাছ দিয়ে সাজানো ছিল বিয়ের আসর। দিনভর চলে গান বাজনা। গানের তালে তালে চলে বর ও কনে পক্ষের নাচানাচি। পাশেই ব্যস্ত রাঁধুনিরা। মোটকথা সত্যিকারের বিয়ের উৎসবে যা যা হয়ে থাকে তাই হয়েছে। শুধু বর-কনে দাঁড়িয়ে আছে একই জায়গাতে। সকাল ৯টা থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের আয়োজন। দুপুর থেকে জমে ওঠে বিয়ের অনুষ্ঠান। বর-কনের চারপাশ ঘিরে গল্পে মেতে ওঠেন অতিথিরা। এ বিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকার শত শত উৎসুক জনতার আগমন ঘটে। বট গাছের মা চপলা রানী বলেন, দুই মাস আগে তিনি বটের মা হওয়ার সিদ্ধান্ত পান শ্মশান কমিটির মাধ্যমে। মূলত ছেলের বিয়ে দেওয়া উপলক্ষেই তিনি মা হয়েছেন। গাছের মা হওয়া এবং ধুমধাম আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে দেওয়ায় তিনি বেশ আনন্দিত। বট গাছের বাবা শ্রী নাথু রাম সরকার বলেন, আমরা গাছ দু’টি লাগিয়েছি। আমরা একদিন থাকবো না, কিন্তু গাছ দু’টি থাকবে বহু বছর, আমাদের স্মৃতির সাক্ষী হয়ে। পাকুড়ের বাবা শ্রী সুশীল চন্দ্র দাস বলেন, বাবার দায়িত্ব পালন করতে পেরে বেশ খুশি হয়েছি। বিয়েটা বট-পাকুড়ের মধ্যে হলেও আমাদের মধ্যেও আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট থাকবে। তিনি আরো বলেন, এটা পুরোনো রীতি ও বিশ্বাস। বটগাছ ও পাকুড়গাছ একসঙ্গে থাকলে বিয়ে দিতে হয়। সেজন্যই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বট-পাকুড় গাছের বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিয়েতে আসা অনামিকা বলেন, এ ধরনের বিয়ের কথা শুনেছি। কিন্তু কখনো দেখা হয়নি। এই প্রথম দেখলাম। খুব আনন্দ পেয়েছি। পুরোহিত প্রদীপ চন্দ্র বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতার দায়িত্বে ছিলেন। গোধূলি লগ্নে মন্ত্র পড়ে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেছেন তিনি। বিয়ের এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন প্রায় পাঁচশত অতিথি। আমন্ত্রিতদের খাওয়ানো হয় পোলাও, সবজি, ঘণ্ট আর পায়েস। সঙ্গে ছিল জলপাইয়ের আচার। বিয়ের এই আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের বিষয়ে শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস চন্দ্র দাস কার্তিক বলেন, হিন্দু শাস্ত্রে আছে বট-পাকুড় পাশাপাশি থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। রীতি চরিতার্থ করার স্বার্থেই এ আয়োজন। বট-পাকুড় এখন আজীবন এভাবে পাশাপাশি থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজু হোসেন পাইকাড় বলেন, বিষয়টি আমাকে কয়দিন আগে জানানো হয়। আজকে এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। গ্রামের যে কোনো উৎসবকে আমি স্বাগত জানাই। তাদের এই আয়োজন গোটা ওয়ার্ডবাসীকে আনন্দিত করেছে।।