শেরপুরে ভুট্টার বাম্পার ফলনে কৃষকের হাসি

155

মোঃ জাকির হোসেন,শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার শেরপুরে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। পোয়াতি ভূট্টার কলা দেখে আনন্দে উচ্ছ্বসিত চাষীরা।এ বছর ভুট্টার রোগ কম হওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় ভুট্টা চাষীরা। বাজারে ভুট্টার দাম ভালো থাকায় লাভের আশা করছেন তারা। জানা যায়, উৎপাদনে ধানের চেয়ে ভুট্টার খরচ কম হওয়ায় অনেক চাষী ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জায়গায় ভুট্টার চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গত এক দশকে ভুট্টার আবাদ ২৬০ শতাংশ বেড়ে ২০১৮ সালে প্রায় ৮ হাজার হেক্টরে পৌঁছেছে। এ সময়ে ফলনও প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৬২ হাজার ৩০৪ টন। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা জানান, ধান চাষে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ পানিতেই ভুট্টা আবাদ সম্ভব। যে কারণে উৎপাদন খরচও কম। এ ছাড়া ফলন বেশি হওয়ায় লাভ বেশি বলে কৃষক ভুট্টা আবাদে ঝুঁকছেন।এবার ভুট্টা উৎপাদনের জন্য ৪৪ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছেড়ে যাবে। ভুট্টা চাষি হাফিজ জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভুট্টার চাষ করে আসছেন। এটিকে বাদ দিয়ে অন্য ফসলের চিন্তা করতে পারেন না। এ বছর মোট ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘা জমিতে ৫২ থেকে ৫৩ মন ভুট্টা হয়। আর বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ২০ মন ধান হয়। এছাড়া ভুট্টা লাগানোর ছয় মাসের মাথায় ফসল ঘরে তোলা হয়। এর মাঝে ছয়বার মাত্র সেচ দিতে হয়। আর ধান চাষ করলে একদিন পর পর সেচ দিতে হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৮/১০ হাজার টাকা আর ভুট্টা বিক্রি করি নুন্যতম ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায়। ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা। তাই মাড়াই শেষে ক্রেতারা জমি থেকেই ভুট্টা নিয়ে যায়। প্রতিমন ভুট্টার দাম ৫শ থেকে ৬শ টাকা। এছাড়াও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভুট্টার ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা আর এতে ভাগ্যও বদল হতে শুরু করেছে এখানকার কৃষকদের। ফলে অতীতের অন্য ফসল উৎপাদনের লোকসান পুষিয়ে নিতে ভুট্টা চাষে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। উপজেলার খানপুর, খামারকান্দি ও সীমাবাড়ি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কম পরিশ্রমে লাভবান হওয়ায় ধান ও অন্য ফসলের বিকল্প হিসেবে ভুট্টার আবাদ করছেন কৃষকরা। খানপুর ইউনিয়নের শালফা গ্রামের কৃষক রফিক জানান, গত বছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে সে প্রায় ৩২৫ মণ ভুট্টা পেয়েছিল। যা বিক্রি করেছিল ৬৫০ টাকা মণ। এবার ভুট্টা চাষের জমি আরেকটু বেশি হবে যাতে করে সে আরও একটু লাভবান হতে পারে। তিনি আরও জানান, ধানের আবাদ করলে বছরে দুটির বেশি ফসল আবাদ করা যায় না। আর ভুট্টা চাষের পরেও আরো দুটি ফসল ফলানো সম্ভব।খামারকান্দি ইউনিয়নের ভাতারিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ভুট্টা আবাদের জমি আমাদের এলাকায় প্রতি বছর বাড়ছে। ভুট্টা আবাদ করে অন্যান্য ফসলের লোকসান তোলার চেষ্টা করা হয়। একই ইউনিয়নের বোয়ালমারি গ্রামের রুহুল আমিন জানান, আমার নিজের কোন জমি নেই। তাই প্রতি বছর জমি বর্গা নিয়ে ভুট্টার আবাদ করে লাভবান হচ্ছি। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষকও ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর শেরপুর উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৫’শ ৮০ হেক্টর জমি। সেই লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ২ হাজার ৬’শ ২০ হেক্টর জমি। মৌসুমের শুরু থেকেই চাষীরা কৃষি বিভাগের সহায়তায় তাদের জমিতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে এবং ভালো ফলন হয়েছে তাতে কৃষকরা লাভবান হবে।